Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
পঞ্চায়েতের গোলমালই কি নেপথ্যে

জেতা কেন্দ্রে পিছিয়ে

পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন চলছে রঘুনাথপুর ১ ব্লক অফিসের ভিতরে। বাইরে দুষ্কৃতীরা দাপাদাপি করছে বন্দুক হাতে। রঘুনাথপুর-বরাকর রাজ্য সড়কের উপরে, দিনেদুপুরে ফাটছে বোমা।

  শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন চলছে রঘুনাথপুর ১ ব্লক অফিসের ভিতরে। বাইরে দুষ্কৃতীরা দাপাদাপি করছে বন্দুক হাতে। রঘুনাথপুর-বরাকর রাজ্য সড়কের উপরে, দিনেদুপুরে ফাটছে বোমা। গত পঞ্চায়েত ভোটের এই ছবিটাই এ বারে লোকসভায় প্রচারের হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। দলের প্রার্থী ব্লক অফিসের সামনে সাদা পায়রা উড়িয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন এলাকায়। গেরুয়া শিবির বলছে, ইভিএমে ‘প্রতিবাদ’ করেছেন ভোটারেরা। আর তার ফলই পেয়েছেন তাঁরা।

কেমন ফল? পুরুলিয়া জেলার ন’টি বিধানসভার মধ্যে সাতটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। সেই সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে রঘুনাথপুরে এ বারের লোকসভা ভোটে সব থেকে পিছিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। যে কেন্দ্রে বিধানসভায় প্রায় ১৫ হাজার ভোটে তারা জিতেছিল, লোকসভায় সেখানেই বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছে ৪২,৬৩৩ ভোটে। বিজেপি দাবি করছে, পঞ্চায়েতের গোলমালের জেরেই এমনটা। তবে, সে কথা মানছে না তৃণমূল। দাবি করছে, আর কিছু নয়, সিপিএমের ভোট বিজেপিতে যাওয়াতেই বিপর্যয়।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন বিরোধী দল গোলমালের অভিযোগ তুলেছিল। পুরুলিয়ার মধ্যে সব থেকে বেশি অভিযোগ উঠেছিল রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায়। রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপির তুলনায় তৃণমূলের জেতা আসন কম ছিল। বিজেপি ছেড়ে কয়েকজন যোগ দেওয়ার পরেও পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বিজেপির অভিযোগ, বোর্ড গঠনের দিন বোমাবাজি করে তাঁদের সদস্যদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই সমিতিতে এখন তৃণমূলের বোর্ড রয়েছে।

সাঁতুড়িতে পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর পরে গোলমাল পেকে ওঠে। অভিযোগ ওঠে, বিজেপির এক সদস্যকে ‘অপহরণ’ করেছে তৃণমূল। তবে তিনি পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলেই যোগ দেন। তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতির বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। আর নিতুড়িয়ায় তো গুলি চলেছিল পঞ্চায়েত ভোটের দিনেই। বুথের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভোটের কাজে আসা দু’টি গাড়িতে। লোকসভার গোটা প্রচার পর্ব জুড়ে এই সমস্ত অশান্তির জন্য শাসকদলের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। নেতারা বলেছেন, রঘুনাথপুর এই ধরণের গোলমাল আগে দেখেনি।

বিজেপির দাবি, অশান্তির ‘প্রতিবাদ’ ভোটযন্ত্রে জানিয়েছে রঘুনাথপুর। পঞ্চায়েতে রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায় সিপিএম পেয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার ভোট। লোকসভায় তাঁদের খাতায় জমা হয়েছে সাড়ে ১১ হাজারের মতো ভোট। হিসেব কষলে দেখা যাচ্ছে, বামেদের এখানে হাজার ছয়েক ভোট কমেছে। আর বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ব্যবধানটা প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার ভোটের। রঘুনাথপুরে বামেদের কমে যাওয়া পুরো ভোটটাই যদি বিজেপির কাছে যায়, তার পরেও পড়ে থাকে ৩৬ হাজার ভোট। সেই ভোট কীসের দৌলতে বিজেপির ঘরে গেল, সেই প্রশ্নটাই উঠে আসছে।

বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল রঘুনাথপুরে। তার পরে বোর্ড গঠনের সময়েও একই অশান্তি দেখেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, পুরুলিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপন্থী যে সংস্কৃতির আমদানি তৃণমূল করেছিল, লোকসভায় তার যোগ্য জবাব দেবেন সাধারণ মানুষ। অবাধ ভোট হওয়ায় লোকসভায় অনেক তৃণমূল কর্মীও আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’ তৃণমূল বরাবর দাবি করে এসেছে, পঞ্চায়েত পর্বে তারা কোনও গোলমাল পাকায়নি। দাবি করেছে, বিজেপির জয়ী সদস্যেরা উন্নয়নমূলক কাজের শরিক হতে স্বেচ্ছায় তৃণমূলে এসেছেন। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ির দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে লোকসভার ফলের কোনও যোগ নেই। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Politics BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy