Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
CBI

Birbhum: জোড়া হানার পরেই কি উৎপাত বন্ধ ‘প্যাডের’

 জাতীয় পরিবেশ আদালেতের নির্দেশে নদী বক্ষ থেকে ইচ্ছে মতো বালি তোলায় ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

এমন ছবি পেতেই বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারে চলল ড্রোনে নজরদারি। লক্ষ্য বালি চুরি ঠেকানো। নিজস্ব চিত্র

এমন ছবি পেতেই বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারে চলল ড্রোনে নজরদারি। লক্ষ্য বালি চুরি ঠেকানো। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ০৭:৪১
Share: Save:

বৈধ ঘাট থেকেই বালি তোলা হোক কিংবা অবৈধ ঘাট থেকে, ‘আন্ডারলোড’ হোক বা ‘ওভারলোড’, বালির গাড়ি চলাচলের জন্য বিশেষ ছাড়পত্র ‘প্যাড’ লাগবেই বীরভূমে। জেলায় এ এক অঘোষিত নিয়ম। বীরভূমে বালি কারবারিদের সঙ্গে কথা বললেই সে নিয়মের কথা জানা যায়। কিন্তু, বুধবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) এবং সিবিআই হানার পরেই সেই ‘প্যাড পার্টি’-দের সাড়া নেই বলে জানা যাচ্ছে।

জেলায় বৈধ বালি কারবারিদের একাংশই বলছেন, ‘‘জোড়া হানায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। আপাতত প্যাড পার্টির উৎপাত নেই। তবে, আমরা জানি পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেই প্যাড স্বমহিমায় ফিরবে। তখন গাড়ি প্রতি অতিরিক্ত টাকাও দিতে হবে।’’

জাতীয় পরিবেশ আদালেতের নির্দেশে নদী বক্ষ থেকে ইচ্ছে মতো বালি তোলায় ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বিভিন্ন শর্ত পূরণ করে ই-অকশনের মাধ্যমেই নদী থেকে বালি তোলার অধিকার অর্জন করতে হয় লিজপ্রাপ্তদের। কিন্তু, সেই ‘বৈধ’ কারবারকে ঘিরে অভিযোগের অন্ত নেই। জেলায় বৈধ বালি ঘাটের সংখ্যা কমবেশি দেড়শো। তবে অভিযোগ, ‘বৈধতা’ কে ঢাল করে জেলার অজয়, ময়ূরাক্ষী, ব্রাহ্মণীর মতো নদী থেকে বেহিসেবি বালি ‘তোলা’ হয়। এর দোসর অবৈধ বেশ কিছু বালি ঘাট। সেখান থেকে শয়ে শয়ে বালির লরি-ডাম্পার জেলা ও জেলার বাইরে যাচ্ছে। সেই সব অতিরিক্ত বালি বোঝাই লরি যাতায়াতের মধ্যেই আসল রহস্য লুকিয়ে। আর সব কিছুর মূলে হল ‘প্যাড’ নামক সেই ছাড়পত্র। -বগটুই কাণ্ডের নেপথ্যেও বালি পাচারের লভ্যাংশের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে লড়াইয়ের তত্ত্ব উঠে এসেছে সিবিআই তদন্তে। বিরোধীরা এই নিয়ে সরব হয়েছেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনগরের একটি সভা থেকে এই ‘প্যাড’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন শুভেন্দু। বলেছিলেন, ‘‘এখানে পাথর থেকে, বালি থেকে, কয়লা থেকে টাকা তোলা হয়। আমি কিছুদিন সেচ মন্ত্রী মন্ত্রী ছিলাম। দেখেছি বীরভূমের নদী থেকে বালি তুলে নদীগুলোকে কেটেকুটে ফাঁক করে দিয়েছে। গাড়ির প্যাড দেখায় আর পুলিশ ছেড়ে দেয়। পুলিশের কিছুই করার নেই।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালি কারবারিরা মানছেন সে কথা। তাঁরা জানান, শুধু সরকারকে মোটা টাকা দিয়ে নদীবক্ষ থেকে বালি ঘাটের লিজ নেওয়াই নয়, বালি উত্তোলনের মাপ অনুযায়ীও সরকারকে রাজস্ব দিতে হয় এবং চালান কিনতে হয়। বালি বহন করছে যে ভারী গাড়ি, তার জন্য ঘাট মালিকদের থেকে চালান নিতে হয়ে। লরি পিছু চালান বাবদ খরচ হাজার চারেক। একটি ১২ থেকে ১৪ বা ১৬ চাকার লরিতে সঠিক মাপের বালি লোড করতে লেসিদের দিতে হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। তার সঙ্গে যুক্ত হয় প্যাডের খরচ (যা তোলা আদায়ের নামান্তর বলেই অভিযোগ)। গাড়ি পিছু প্যাডের জন্য বীরভূমে ২০০০ টাকা দিতে হয় বলে বালি কারবারিদের একাংশই জানান। অন্য দিকে, অবৈধ বালি কারবারিরা লিজ না নিয়েও প্যাডের ভরসায় গোটা কারবার চালান।

ফুলে ফেঁপে উঠা বীরভূমের পাচার কারবারের শিকড় খুঁজতে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি-সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা আসার পরে প্যাড বন্ধ হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তা যাথারীতি চলেছে। কিন্তু, বুধবার থেকে তাতে ভাটা পড়েছে। প্যাডের উৎপাত নেই বললেই চলে।

কী ভাবে চলে কারবার?

বালি কারবারিদের কাছে জানা গিয়েছে, আগে প্রত্যেক বালি বোঝাই লরি ডাম্পার চালকদের টাকা দিয়ে প্যাডের কাগজ নিতে হত। এখন সেই নিয়ম বদলে ‘ই পদ্ধতি’ এসেছে। বালি ঘাট থেকে মূল রাস্তার মোড় গুলিতে পাহারায় থাকে ‘প্যাড পার্টি’। বালি নেওয়ার সময় ঘাট মালিকেরা সেই টাকা কেটে রেখে দেন। তার পরেই ‘প্যাড পার্টি’র এক প্রতিনিধির মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেন গাড়ির নম্বর। সেটা যাচাই করে ছাড় দেওয়া হয় প্রতিটি গাড়িকে। ঝাড়খণ্ডের এক ব্যক্তি বর্তমানে প্যাডের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গিয়েছে বিভিন্ন সূত্রে।

অন্য বিষয়গুলি:

CBI ED Enforcement Directorate CBI Raid ED Raids
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy