ভবিষ্যতের তারা। সিউড়ির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলছে ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
মধ্য তেইশের ক্যারোলিনা মারিন তখনও স্ক্রিনজুড়ে! চোখের তারায় হাসির ঝিলিক! মাঝে মাঝেই লম্বা বলে পিভিকে ব্যাকহ্যান্ডে বেশি খেলানো তার শটগুলো রিপিট টেলিকাস্ট হচ্ছে বার বার।
কিন্তু সে সব দৃশ্যের থেকেও, দেশের মেয়ে জন্য সারা সন্ধে টিভির সামনে থেকে নড়েনি ওরা!
চোখের সামনে এখনও ভাসছে সিন্ধুর গলায় জ্বলজ্বল করা রুপোর পদকখানা। থার্ড কোর্ট থেকে হায়দরাবাদি কন্যার প্রচণ্ড জোরে ব্যাকহ্যান্ডে নেওয়া কতিপয় শটগুলো। ওরা সৌম্যজিৎ, ঈশিতা, শ্রেয়ান, আর্যেষ। অলিম্পিক্স ফাইনালে পিভি সিন্ধুর ম্যাচ দেখবে বলেই শুক্রবার প্র্যাকটিস সেরে জলদি জলদি বাড়ি ফিরেছিল ওরা।
খেলা শেষ!
হার-জিতও জানা!
তবু রিও-র হাড়াহাড্ডি ফাইনালের ঘোর ওদের চোখে।
মাত্র এক বছর আগে পর্যন্তও র্যাকেট আর শাটল-এর এই লড়াই নিয়ে তেমন কোনও উন্মাদনাই ছিল না জেলায়। পিকনিক স্পটে বা শীতকালে রাতের বেলায় পাড়ায় পাড়ায় র্যাকেট হাতে লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ ছিল জেলার ব্যাডমিন্টন। সে সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ গোডাউনে বা ত্রিপল টাঙিয়ে ব্যাডমিন্টন খেললেও, ঠিক প্রশিক্ষণ শিবির বলতে যা বোঝায় তা ছিল না। বীজটা বপণ হয়েছিল গত বছর অগস্ট মাসে।
সৌম্যজিৎ, ঈশিতা, শ্রেয়ানরা এখন প্রত্যেকেই সিউড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নিয়মিত ব্যাডমিন্টন অনুশীলন করে। ম্যাচে সিন্ধুর খেলা দেখে প্রত্যেকেই অভিভূত। নাই বা হল সোনা পাওয়া। কিন্তু যে লড়াই ওরা দেখেছে সেটা মন ভাল করে দিয়েছে সৌমজিৎ, শ্রেয়ানদের। ওরা সিউড়ির দুটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। আর্যেস পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। ছোট্ট ঈশিতা ইউকেজিতে। রাজ্য ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো কোচেদের হাতে একটু একটু করে গড়ে উঠছে ওই তারা। এমন একটা ম্যাচ দেখাটা তাই ওরা বহু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল।
এ বছরই সিউড়িতে ৭৮তম রাজ্য জুনিয়র ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করেছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
টুর্নামেন্টের অনূর্ধ্ব ১৩, ১৫, ১৭ এবং ১৯ এই চারটি বিভাগে মোট ১৭৩জন প্রতিযোগী যোগদান করেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল, বীরভূম জেলা থেকে একজনও প্লেয়ার প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেনি। বিষয়টি চরম অবাক করেছিল জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীকে। তিনি ডিএসএর সম্পাদককে বলেন, ‘‘যা করতে হয় করুন। প্রশাসন সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু বাইরে থেকে কোচ আনিয়ে জেলার উঠতি প্লেয়ার ও নতুনদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’
জেলায় ব্যাডমিন্টন চর্চার ভাবনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। জেলা শাসকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও। জেলার ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এতভাল পরিকাঠামো থাকা সত্বেও অন্যান্য জেলার মতো এই জেলা থেকে কোনও নতুন ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার না উঠে আসায় আক্ষেপ করছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আশ্বাস ছিল, জেলা ক্রীড়া সংস্থা চাইলে এখানে কোচ পাঠাতে তিনি রাজি।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রাজ্য ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের রেজিষ্টার কোচেদের কাছ থেকেই সিউড়িতে খেলা শেখার সুযোগ পেতে শুরু করে জেলার ছেলেমেয়েরা।
মাসে দু’বার কোচ এবং বাকি সময় সিনিয়র প্লেয়ারদের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন চলছে তারপর থেকেই। সিনিয়র সুমন মুখোপাধ্যয়, তাপস বিশ্বাস, দেবজ্যোতি কর্মকাররা কোচেদের কথা মেনে খব যত্নে সপ্তাহে পাঁচ দিন অনুশীলন করান। যে ভাবে ক্রমাগত উন্নতি করছে খুদেরা তাতে সামনের কোনও রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারবে বলে আশাবাদী বীরভূম জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ন সম্পাদক অমিত দত্ত রায়।
স্বপ্ন দেখছেন অভিভাবকেরাও। রক্ষাকর দাস, অনীশ বিশ্বাসরা বলছেন, ‘‘ভালই উন্নতি করেছে ওরা। সঙ্গে পিভি সিন্ধুর সাফল্য ওদের আরও উৎসাহিত করবে।’’
তবে ঘটনা হল, সব অভিজ্ঞতাই সুখকর নয়। জানুয়ারিতে যখন প্রশিক্ষণ শুরু হয় তখন, প্রায় ১৫০জন ভর্তি হয়েছিল। এখন সংখ্যাটা ৩০-৩৫জন। নিয়মিত প্র্যাকটিসে আসে কেবল তারাই। বাকিদের কেউ পড়াশোনা ও পরীক্ষা-টিউশনের জন্য আসে না। এ ছাড়া খরচও একটি সমস্যা বলছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ।
তবে সিন্ধুর সাফল্যের পর ফের উৎসাহ বাড়বে ব্যাডমিন্টনে— এমনটা আশা করছেন সকলেই।
সিউড়ির বাইরে জেলার অন্য শহরেও খেলার পরিকাঠামো গড়ে উঠবে, আশা এমনটাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy