Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

একই রাতে সংঘর্ষে তপ্ত তিন গ্রাম

ডোমাইপুর গ্রামটি পাড়ুই থানার অধীনে হলেও সিউড়ি ২ ব্লকের বনশঙ্কা পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়ে। তৃণমূলের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য এলাকা জুড়ে বোমাবাজি করে।

অগ্নিগর্ভ: সিউড়ির ডোমাইপুরে পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে ভাঙচুর।নিজস্ব চিত্র

অগ্নিগর্ভ: সিউড়ির ডোমাইপুরে পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে ভাঙচুর।নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও পাড়ুই শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০১:১০
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে তেতে রয়েছে পাড়ুই থানা এলাকা। বৃহস্পতিবার রাতেই বিজেপি এবং তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে ডোমাইপুর, চৌমণ্ডলপুর ও ভেড়ামারি গ্রামে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে। ঘটনার জেরে এলাকার পরিস্থিতি থমেথমে। পুলিশের টহল চলছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বোমাবাজির ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাঁদের মধ্যে সাত জন বিজেপি-র এবং বাকিরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক।

ডোমাইপুর গ্রামটি পাড়ুই থানার অধীনে হলেও সিউড়ি ২ ব্লকের বনশঙ্কা পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়ে। তৃণমূলের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য এলাকা জুড়ে বোমাবাজি করে। সিউড়ি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা পম্পা চৌধুরীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি ও ইটবৃষ্টি করা হয়। ভাঙচুর করা হয় বাড়ির কাচ, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরবাইকে। এমনকি পম্পাদেবীর প্রতিবন্ধী স্বামীকে দুষ্কৃতীরা মারধর করে বলেও তৃণমূলের অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে পাড়ুই থানার বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।

পম্পাদেবীর দাবি, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎই বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। প্রথমে গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তার পর তাঁর স্বামী এবং নাবালক ছেলেকে মারধর করে। বাড়ির সাইকেল, চেয়ার সব ভাঙচুর করে। তিনি বলেন, ‘‘ওরা কী জন্য এই ভাবে হামলা করল, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি ওদের কাছে জানতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমার সঙ্গে কোন কথাই বলেনি। এমনকি রাত দেড়টা নাগাদ ওরা আবার এসে আমাদের হুমকি দেয়। বাড়ির পাশে একটা বোমা ফাটায়।’’

এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্যই এই ধরনের ঘটনা বলে দাবি তৃণমূলের সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি নুরুল ইসলামের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষের মনে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে বিজেপি। আসলে যারা বিজেপিতে গিয়েছিল, তারা আর ওই দলে থাকতে চাইছে না তাই মানুষকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছে বিজেপি।’’

বিজেপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গ্রামের বিজেপি কর্মীদের দাবি, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য রাতে বোমাবাজি করে। পরে স্থানীয় বিজেপি নেতা নকুল বাগদির বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ করলে ওই দুষ্কৃতীরা সেই সময় পালিয়ে যায়। অভিযোগ, গভীর রাতে আবার কিছু দুষ্কৃতী এলাকায় ঢুকে একাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি-র স্থানীয় মণ্ডলের সভাপতি পবন বাগদি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী হামলায় অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের মানুষই প্রতিরোধ করেছেন। কোনও বিজেপি কর্মী ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।’’

চৌমণ্ডলপুর গ্রামে আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের গোরাপাড়ায় বিজেপির অঞ্চল কমিটির বৈঠক শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। অভিযোগ, তাঁদের হুমকি দেয় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। দু’পক্ষ বচসায় জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় বোমাবাজি। বিজেপি সমর্থকদরে বাড়িতে বোমাবাজি ও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। ফের যাতে এলাকায় অশান্তি না ছড়ায় তার জন্য শুক্রবার সকালে পুলিশবাহিনী যায় এলাকায়। যদিও এ দিন গ্রামে ঢুকতে সংবাদমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হয়। বিজেপি কর্মী মোজাই মল্লিক বলেন, ‘‘বৈঠক থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের বেশ কয়েক জনকে রাস্তায় আটকে মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। রাতে আমার বাড়িতেও বোমাবাজি করা হয়।’’ ওই রাতেই ভেড়ামারি গ্রামে বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে বোমাবাজি ও গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা শেখ সামাদের দাবি, ‘‘এলাকায় শান্তির জন্য আজ মানুষ বিজেপিকে বেছে নিয়েছেন। অথচ তৃণমূল বহিরাগত দুষ্কৃতী এনে বারবার গ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই গ্রামে যেন শান্তি ফিরে আসে। পুলিশ যেন দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে ওই অঞ্চলের দায়িত্ব থাকা ইলামবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘বিজেপি প্রতিটা জায়গায় সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে। চৌমণ্ডলপুরেও তৃণমূল কর্মীদের উপরে আক্রমণ হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।’’ দু’টি ঘটনাতেই শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ হয়নি বলে পুলিশ জানায়। কাউকে গ্রেফতারও করা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Violence TMC BJP Suri Parui
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy