Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rampurhat TMC

উন্নয়নে কি ‘ব্রাত্য’ বিরোধীরা, তরজা

রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ১৩ সদস্যের কাষ্ঠগড়া পঞ্চায়েতে ৭টি আসনে জয়ী হয়ে বিজেপি প্রথম বার পঞ্চায়েত দখল করে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট  শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৫:৩২
Share: Save:

শতাংশের হিসেবে ৮ শতাংশও নয়। বীরভূম জেলার পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে বিরোধীদের হাতে থাকা পঞ্চায়েতের সংখ্যা এতটাই কম। ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিরোধী পঞ্চায়েত মাত্র ১৩টি। সেই ১৩টি পঞ্চায়েতের প্রতিটিতেই শাসক দল তৃণমূল উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে বলে ভোটের এক বছর পর বিরোধীদের দাবি। তৃণমূল শিবিরের পাল্টা দাবি, উন্নয়ন করতে না পেরে মিথ্যে অভিযোগ করছে বিরোধীরা।

জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে যে ১৩টি পঞ্চায়েত বিরোধীদের দখলে তার মধ্যে রামপুরহাট মহকুমায় ৭টি পঞ্চায়েত পড়ছে। এর মধ্যে বিজেপির দখলে আছে ২টি। বাম-কংগ্রেসের দখলে আছে ৩টি। বাকি দু’টিতে বাম-কংগ্রেস ও বিজেপির সদস্যরা শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আছেন। বিজেপি যে দুটি পঞ্চায়েতে একক ভাবে ক্ষমতায় আছে তার মধ্যে ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এর আগেও ২০১৮-২৩ সাল পর্যন্ত বিজেপির দখলে ছিল। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৬ আসনের মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি টসে জিতে ৯-৭ ফলাফলে পুনরায় নিজেদের দখলে রাখে।

রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ১৩ সদস্যের কাষ্ঠগড়া পঞ্চায়েতে ৭টি আসনে জয়ী হয়ে বিজেপি প্রথম বার পঞ্চায়েত দখল করে। তৃণমূল ও সিপিএম ৩টি করে মোট ৬টি আসন পায়। বছর ঘুরতেই লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কাষ্ঠগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধান-সহ এক বিজেপি সদস্যকে তাদের দলে টেনে নেয়। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূল কেবল প্রধান ও বিজেপির অন্য এক জন সদস্যকে নিজেদের দলে টেনেছে। তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, বিজেপি সদস্যরা স্বেচ্ছায় দলে যোগ দিয়েছেন।

লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মল্লারপুর ১ ও কাষ্ঠগড়া দু’টি পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছে। ওই দুই পঞ্চায়েত ছাড়া নলহাটি ২ ব্লকের বারা ১, বারা ২ এবং মুরারই ২ ব্লকের পাইকর ১ এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত বাম কংগ্রেস জোটের দখলে। বিজেপি ও বাম কংগ্রেসের জোট নলহাটি ২ ব্লকের শীতলগ্রাম এবং মুরারই ২ ব্লকের জাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষমতায় আছে। নলহাটি ২ ব্লক থেকেই জেলা পরিষদের একটি বিরোধী আসনে বামের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী সাব্বির হোসেন (জয়) জয়ী হন। লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য বারা ২ এবং শীতলগ্রাম এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া বাকি বারা ১, জাজিগ্রাম, পাইকর ১ এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল এগিয়ে ।

বিরোধীদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির সদস্য থেকে প্রধান, সকলেরই অভিযোগ পঞ্চায়েতের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টাকা পেলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল থাকায় বিরোধী পঞ্চায়েতের সদস্যদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আরও অভিযোগ, সরকারি ত্রাণ, ত্রিপল, কাপড়, কৃষকদের বিনামূল্যে ধান, সর্ষে, তৈলবীজ, বাদাম, ডাল বীজ সরবরাহের ক্ষেত্রেও বিরোধী সদস্যদের কিছু জানানো হয় না।

বিজেপি পরিচালিত মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কবিতা বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতের উন্নয়নের বরাদ্দ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার সমান হারে প্রতিটা পঞ্চায়েতকে বন্টন করে। ওই টাকা আটকাতে পারবে না বলে পঞ্চায়েত সমিতি কোনও হস্তক্ষেপ করে না। বাদবাকি সরকারি ত্রাণ, ত্রিপল, সরকার থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ বিভিন্ন ফসলের বীজ কোনও রকম সরবরাহ পঞ্চায়েত থেকে করা হয় না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত বিরোধী পঞ্চায়েত সদস্যরা যদি কোনও প্রকল্প পঞ্চায়েত সমিতিতে জমা দেন, সেই প্রকল্প কেবল বিরোধী সদস্য বলে অনুমোদন দেওয়া হয় না।’’

নিজের পঞ্চায়েতের উদাহরণ দিয়ে কবিতার দাবি, আম্বা মোড় এলাকায় নিকাশি নালা সংস্কার এবং নিমতলা এলাকায় একটি রাস্তা সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী সদস্য জমা দিলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ তৃণমূলের সদস্যদের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।

একই অভিযোগ করেন নলহাটি ২ ব্লকের বারা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাম কংগ্রেস জোটের প্রধান সোনালি দাস, পাইকর ১ পঞ্চায়েতের বাম কংগ্রেস জোটের প্রধান আনজুরা বিবি। বিজেপির সমর্থন নিয়ে থাকা বাম কংগ্রেস জোটের দখলে থাকা জাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তুষার রাজবংশী অবশ্য বলছেন, ‘‘সরকারি প্রকল্প থেকে টাকা পেতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’ তবে তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে দল ভাঙানোর জন্য চাপ আছে।

বিরোধী পঞ্চায়েতের প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির স্তর থেকে অসহযোগিতার অভিযোগ মানেননি ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা বীরভূম জেলা পরিষদের প্রাক্তন কো-মেন্টর ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘বিরোধী পঞ্চায়েতগুলি তাদের ২০২৩- ২৪ আর্থিক বছরের প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে কমপক্ষে ৩২ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে না। যারা তাদের প্রাপ্ত অর্থ খরচ করতে পারে না তাদের কেন নতুন করে প্রকল্পের অনুমোদন দেবে সরকার?’’

অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন বীরভূম জেলা পরিষদের একমাত্র বিরোধী সদস্য সাব্বির হোসেনও। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে বিরোধী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আছে সেই সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের পাঠানো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের বৈঠকে আগামী দিনে আলোচনা করে প্রশাসনের নজরে আনা হবে।’’ ধীরেন্দ্রনাথ পাল্টা বলেন, ‘‘সরকারি ত্রাণ থেকে কৃষকদের সরকারি বীজ সরবরাহ, ত্রিপল বিলি সব ক্ষেত্রেই তো প্রতিটি স্থায়ী সমিতিতে একজন করে বিরোধী সদস্য আছে। সেই সমস্ত বিরোধী সদস্যরা তো স্থায়ী সমিতির মিটিংয়ে থাকেন না। কেউ যদি উপস্থিত হন তাহলে সেই সদস্য কোনও আপত্তিও করেন না।’’

বিরোধীদের অভিযোগ মানেননি জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখও। তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরোধী পঞ্চায়েতদের কাজের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না এ অভিযোগ ঠিক নয়।’’ কাজলের আশ্বাস, ‘‘এ রকম যদি কোনও অভিযোগ থাকে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy