ছাদ থেকে খসে পড়েছে চাঙড়। ছবি: সুজিত মাহাতো।
ছাদ চুঁইয়ে নোংরা জল তো পড়়েই, অস্ত্রোপচার চলাকালীন যে কোনও সময় মাথার উপর থেকে চাঙড়ও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের স্বল্পক্ষত চিকিৎসা কেন্দ্রে বা ল্যাপারোস্কোপি ইউনিটের অপারেশন থিয়েটার তাই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে গত ন’ মাস। সেই ন’ মাসে রোগীদের সঙ্কট বেড়েছে, কিন্তু প্রশাসনের টনক নড়েনি বলে অভিযোগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অনেক দরবার করার পরেও ঘরটির হাল ফেরানোর জন্য সরকারি বরাদ্দ আসেনি।
রাজ্যে পালাবদলের পরে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালটি ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করেছিলেন স্বল্পক্ষত চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করার কথা। কিন্তু বেহাল হাসপাতালে বারবার হোঁচট খেয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, স্বল্পক্ষত চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য সবুজ সঙ্কেত মেলার পরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এসে প্রায় আট-ন’ মাস পড়েছিল। অপারেশন থিয়েটার তৈরি হয়নি। অবশেষে, ২০১৪ সালের জুলাই নাগাদ প্রকল্পটি শুরু হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার এবং বৃহস্পতিবার সেখানে অস্ত্রোপচার হত। অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলির পাথর, হার্নিয়া-সহ বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি বায়োপসির নমুনাও সংগ্রহ করা হত সেখান থেকে। তারই মধ্যে ২০১৫ সালের মে নাগাদ যন্ত্র ভেঙে প্রায় মাস দেড়েক অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকে। সারাই করে ফের চালু হতে না হতেই দেখা দেয় নতুন সমস্যা। অপারেশন টেবিলের উপরে ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়তে শুরু করে। ছাদে ফাটল দেখা দেয়। পরিস্থিতি এমন হয়, যে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই বড়সড় দু্র্ঘটনার আশঙ্কায় অপারেশন বন্ধ করে দেন চিকিৎসকেরা। সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, হাসপাতালের এক তলায় অপারেশন থিয়েটারটি রয়েছে। তার ঠিক উপরে, দোতলায় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড। কর্মীদের একাংশের অনুমান, ওই ওয়ার্ডের শৌচাগারের নোংরা জল ছাদ চুঁইয়ে অপারেশন থিয়েটারে পড়ছে।
কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কেন চালু করা গেল না অপারেশন থিয়েটারটি?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাদটি সংস্কার করার জন্য পূর্ত দফতরকে কর্তৃপক্ষ তখনই চিঠি দিয়েছিল। গত অক্টোবরেই পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিরা হাসপাতাল ঘুরে দেখে বিভিন্ন জরুরি সংস্কারের তালিকা তৈরি করেন। আনুমানিক খরচ দাঁড়ায় ৭৮ লক্ষ টাকা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর তড়িঘড়ি সেই রিপোর্ট রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি। এ দিকে দীর্ঘ দিন অপারেশন থিয়াটারটি বন্ধ থাকায় রোগীদের সমস্যা বাড়তে থাকে। ফের পূর্ত দফতরের দ্বারস্থ হয় স্বাস্থ্য দফতর। গত ডিসেম্বরে শুধু অপারেশন থিয়েটারের ছাদ এবং তার পাশের কিছু জায়গা মেরামতের জন্য নতুন করে ১৪ লক্ষ টাকার বাজেট তৈরি করে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনও বরাদ্দ আসা তো দূরের কথা, কোনও উচ্চবাচ্যই হয়নি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘আমরা ল্যাপ্রোস্কোপি ইউনিট মেরামতির জন্য স্বাস্থ্য ভবনে বাজেট পাঠিয়ে দিয়েছি। এখনও অর্থ মেলেনি। তবে আশা করছি শীঘ্রই বরাদ্দ পাওয়া যাবে।’’ পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘ওই কাজের জন্য প্রথমে একটি খরচের হিসাব করা হয়েছিল। পরে আরও একবার আলাদা করে হিসেব করা হয়। তবে এখনও বরাদ্দের টাকা আসেনি।’’ এ দিকে পিত্তথলিতে পাথর জমে পেটের যন্ত্রণা দিন দিন বেড়ে চলেছে হুড়া থানা এলাকার লধুড়কা গ্রামের চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ মাস ধরে ঘুরছি। ফেরি করে আমার দিন গুজরান হয়। বাইরে অস্ত্রোপচার করানোর ক্ষমতা নেই। ডাক্তারবাবুরাও বলতে পারছেন না কবে অপারেশন হবে।’’ একই রকমের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন পুরুলিয়া ১ ব্লকের লাগদা গ্রামের কানাইলাল চক্রবর্তী-সহ এলাকার অনেকে। কবে চালু হবে অপারেশন থিয়েটার— সেই পথ চেয়েছেন তাঁরা।
পূর্ত দফতর সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, নতুন সরকার গঠনের পরে বরাদ্দের অপেক্ষা না করে দফতর তড়িঘড়ি ছাদ মেরামতির কাজ শুরু করতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে, কিছু দিনের মধ্যেই অপারেশন থিয়েটারটি ফের চালু হওয়ার আশা রয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy