কেন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে? কী বললেন বাইরন বিশ্বাস? —ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘি আর ঝালদা— একটি বিধানসভা কেন্দ্র, একটি পুরসভা। সারা রাজ্যে এই দু’টিতেই জ্বলছিল কংগ্রেসের প্রদীপ। কিন্তু কংগ্রেসের প্রতীকে সাগরদিঘি কেন্দ্র থেকে জিতে আসা বাইরন বিশ্বাস হাত বদলে সোমবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ায়, জোর চর্চা শুরু হয়েছে ঝালদায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সাংসদ হলেও তা দিল্লির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রেক্ষিতে এখন শুধু ঝালদা পুরসভাই কংগ্রেসের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে রইল। কিন্তু তা-ও কংগ্রেসের হাতছাড়া হবে না তো? আশঙ্কা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। তবে পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলছেন, ‘‘ঝালদার কংগ্রেস কর্মীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বা সততা রাজ্যের কাছে উদাহরণ।’’
বস্তুত ঝালদায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের টক্কর বেড়েছে ২০২২ সালে পুরভোটের ফল ঘোষণার পরেই। ১২ আসনের মধ্যে তৃণমূল ও কংগ্রেস পাঁচটি করে এবং নির্দল দু’টি আসন পায়। এর মধ্যেই কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন হয়ে যান। দুই নির্দল পুরপ্রতিনিধির সমর্থনে তৃণমূল বোর্ড গড়লেও বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। নির্দল কাউন্সিলেরা তাদের শিবিরে আসায় কংগ্রেস অনাস্থা নিয়ে আসে। অক্টোবর থেকে কয়েক মাস ধরে কংগ্রেস কখনও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, কখনও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত টানা লড়াই চালিয়ে যায়। গিয়েছে। কংগ্রেস নেতা-আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস ঝালদার পুরবোর্ড দখল করে।
ঝালদার কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের দাবি, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি কখনও পুলিশ, কখনও প্রশাসনকে ব্যবহার করে শাসকদল বিরোধী পুরপ্রতিনিধিদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছিল। তা-ও সফল হয়নি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ ঝালদার অতীত মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৫ সালের পুরভোটের এক বছরের মধ্যে একাধিক কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি তৃণমূলে যোগ দেন। কংগ্রেস ঝালদা পুরসভা হারায় বাইরন-কাণ্ডের পরে ঝালদার বাসিন্দাদের একাংশের মনে সেই আশঙ্কা ফের উঁকি দিচ্ছে।
যদিও নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী তথা ঝালদার উপপুরপ্রধান কংগ্রেসের পূর্ণিমা কান্দু বলেন, ‘‘ঝালদার কংগ্রেস কর্মীরা ভালবেসে দল করেন। কোনও অভিসন্ধি থাকে না। হুমকি বা প্রলোভনেও তাঁদের টলানো যায় না।’’ পুরসভার দলনেতা কংগ্রেসের বিপ্লব কয়ালও দাবি করেন, ‘‘সাগরদিঘি আর ঝালদা এক নয়। আমাকেও টানা দু’মাস জেল খাটিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস ছাড়ার কথা ভাবতেও পারব না।’’ তাঁর কটাক্ষ, উন্নয়নের ধুয়ো তুলে অতীতে কংগ্রেস থেকে যাঁরা তৃণমূলে গিয়েছেন তাঁরা কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি।
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘ঝালদা পুরসভার ক্ষমতায় বিরোধীরাই রয়েছেন। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় তৃণমূলে আসতে চান, সে ক্ষেত্রে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলে ঝালদায় আমরাই বোর্ড গড়ব। সেটাই স্বাভাবিক। বাইরন বিশ্বাস স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাই দল তাঁকে গ্রহণ করেছে।’’
সে সম্ভাবনা উড়িয়ে ঝালদার বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘পুরভোটের পরে আমাদের জয়ী পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দুকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হলেও, তিনি যাননি। বলেছিলেন, জীবন থাকতে তিনি কংগ্রেসের মতাদর্শ বিসর্জন দিতে পারবেন না। ঝালদা কংগ্রেসের মতাদর্শেই বিশ্বাসী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy