Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ভোট দিলেন বৃদ্ধা, রেগে কাঁই ‘নাতি’

তখন বেলা দু’টো হবে। এক জন, দু’জন করে ভোট দিতে আসছেন। ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটি। বছর ষাটের এক বৃদ্ধাকে নিয়ে বুথে ঢুকলেন এক যুবক। দু’জনের ভোটার কার্ড মেলানো, আঙুলে কালি দেওয়া ইত্যাদি পর্ব চুকে গেলে ওই যুবক দাবি করলেন, ‘‘ঠাকুমার ভোটটা আমিই দেব।’’

বিদ্যুৎ মজুমদার, প্রিসাইডিং অফিসার
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৩
Share: Save:

তখন বেলা দু’টো হবে। এক জন, দু’জন করে ভোট দিতে আসছেন। ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটি।

বছর ষাটের এক বৃদ্ধাকে নিয়ে বুথে ঢুকলেন এক যুবক। দু’জনের ভোটার কার্ড মেলানো, আঙুলে কালি দেওয়া ইত্যাদি পর্ব চুকে গেলে ওই যুবক দাবি করলেন, ‘‘ঠাকুমার ভোটটা আমিই দেব।’’

মানে?

— আসলে ঠাকুমা চোখে দেখেন না তো। তাই সঙ্গে এসেছি।

নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের পাড়ুই থানা এলাকার কসবা ফ্রি বেসিক প্রাইমারি স্কুলে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে রয়েছি আমি। কাগজে পড়েছি, তেতে রয়েছে এখানকার রাজনীতির মাঠ। ওই রকম দাবি শুনে সতর্ক হলাম। তা ছাড়া, অতীতে ভোটের কাজে বহু জায়গায় গিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে চকিতে মনে হল ওই যুবক মিথ্যে বলছেন। ভাবলাম একটু বাজিয়ে নিই।

উঠে দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে একটু জোরে বৃদ্ধার উদ্দেশে প্রশ্নটা ছুঁড়লাম, মাসিমা চোখে দেখেন না?

— না বাবা। চোখে ঠিক মতো দেখি না।

কতটা দেখেন?

— চেনা মানুষ চিনতে পারি।

আমাকে চেনেন?

— তুমি তো অচেনা লোক। তোমায় চিনবো কী করে?

বৃদ্ধার চোখের সামনে একটি আঙুল দেখিয়ে ফের প্রশ্ন করলাম। জবাবে বৃদ্ধা জানালেন, ঠিকই দেখেছেন একটা আঙুল। বললাম, এই তো দিব্যি দেখছেন।

এতক্ষণে বেজায় চটেছেন সঙ্গী যুবক। তার যেন আর তর সইছে না। তর্ক জুড়লেন আমার সঙ্গে। দাবি করলেন, ঠাকুমার রঙ চিনতে সমস্যা হয়। বৃদ্ধাও ‘নাতি’র কথায় সায় দিলেন। একটু বল পেয়ে যুবক উদ্ধত ভাবে প্রশ্ন করলেন, ‘‘ঠাকুমাকে ভোট দিতে সাহায্য করতে পারব না?’’

কী করব ভাবছি, হঠাৎ চোখ গেল বৃদ্ধার পরনের নীল রঙের শাড়ির দিকে। কী রঙের শাড়ি পরেছেন মাসিমা?

— নীল।

মুহূর্তে পরিষ্কার হয়ে গেল সব। বৃদ্ধাকে এক ইভিএমের কাছে যেতে নির্দেশ দিলাম। বললাম, ওই মেশিনে আপনার শাড়ির রঙের বোতাম আছে। যাকে ইচ্ছে, তার পাশে থাকা নীল বোতাম টিপে দেবেন। দেখবেন, একটা বিপ শব্দ হচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত ভোটটা নিজেই দিলেন বৃদ্ধা। কোনও সাহায্য ছাড়াই। যুবক রাগে গড়গড় করছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানকে বললাম সরিয়ে নিয়ে যান ওকে। ছাপ্পা রিগিং না হলেও ভোটার প্রতিবন্ধী বা অক্ষম, এই অজুহাতে অন্যের হয়ে ভোট দেওয়া অপরাধের মধ্যে পড়ে। এমনটা হয়েও থাকে। অতীত অভিজ্ঞতাও তাই বলছে।

যদিও ভোটের আগের দিন বুথে পৌঁছনো ইস্তক সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। স্ব-নির্ভরদলের রান্না করা আলুপোস্ত, ডিমের ঝোল দিয়ে রাতের খাওয়াটাও মন্দ হয়নি। ভোটের দিন ভোর সাড়ে চারটেয় উঠে তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম সকলেই। সতর্ক ছিলাম। ভোট পাঁচটা থেকে লাইন পড়েছিল। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের সঙ্গে এলাকার কিছু মানুষের ঝামেলা হয়েছিল। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী চলে আসায় সেটা আর বাড়েনি। মোট ৯১৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছিলেন ৭৯৬ জন। ঠিক ছ’টার মধ্যে ভোট শেষ।

গত বিধানসভা ভোটে খয়রাশোলের রসা স্কুলে দায়িত্ব পেয়েছিলাম। রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুকের নলের নিশানায় পড়েছিলাম! গত লোকসভায় সিউড়ির হাটজনবাজার এলাকার বুথে রাতে সাপ ঢুকে গিয়েছিল! এ বার তেমন কোনও সমস্যা হয়নি শুধু ওই ‘ঠাকুমা-নাতির’ কাণ্ড ছাড়া!

(প্রধান শিক্ষক, চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy