কতটা বড় হল ‘সন্তান’, নিজের লাগানো গাছ দেখছেন দুখু মাজি। —নিজস্ব চিত্র।
নেশা এবং পেশা একই। গাছ লাগানো। দুখু মাজির ধ্যান-জ্ঞান, জীবনের সবটা জুড়ে রয়েছে বৃক্ষরোপণ। গাছ-পাগল এই লোকটিকে পুরুলিয়ার মানুষ চেনেন ‘গাছ বাবা’ নামে।
বাঘমুন্ডির সিন্দ্রি গ্রামে বাড়ি দুখুর। বয়স ৬৫ ছুঁইছুঁই। দুই সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা। দুরারোগ্য অসুখে ভুগছে ছোট ছেলে। রাঁচীতে তাঁর চিকিৎসা করানোর জন্য প্রতি মাসে অন্তত হাজারখানেক টাকা খরচ হয়। সংসারে এত ঝামেলার মাঝে দুখু সুখ খুঁজে পান গাছ লাগানোয়। গাছের ছায়াতেই তাঁর শান্তি।
স্কুলের গণ্ডি পার করেননি দুখু। তবে মানব জীবনে গাছের গুরুত্ব কতখানি, সে জন্য কেতাবি জ্ঞান প্রয়োজন হয়নি তাঁর। তবে দুখুর এই গাছের নেশার পিছনে রয়েছে এক মজার গল্প। তখন তাঁর বয়স প্রায় ৩০ বছর। বাঘমুণ্ডি এলাকায় এক সরকারি আধিকারিকের মুখে দুখু শুনেছিলেন, গাছের গুরুত্বের কথা। তাঁর কাছে শুনেছিলেন, ‘‘গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়।’’ সেই অক্সিজেনের গুরুত্ব ঠিক কতটা সে দিন সেটাও ওই ‘সরকারিবাবু’র কাছে হাঁ করে বসে শুনেছিলেন দুখু। তার পর থেকেই গাছ লাগানোর নেশা পেয়ে বসে তাঁকে।
জায়গায় জায়গায় গাছ লাগানো আর গাছে জল দিয়ে সারা দিন এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ান তিনি। গাছপাগল এই লোকটির পরিচিতিই তৈরি হয় ‘গাছ বাবা’ বলে। এখন পুরুলিয়া জেলার মানুষ তাঁকে চেনেন এই নামে। দুখু জানান, এত দিন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি বড় গাছ গাছ লাগিয়েছেন তিনি। তবে সব গাছ বাঁচেনি। দুখুর কথায়, ‘‘গাছ লাগানোর পর বেড়া দেওয়া হলে অনেকে জ্বালানির জন্য ওই বেড়ার শুকনো ডালপালা বাড়ি নিয়ে চলে যেতেন। ফলে গাছ খেয়ে যেত গরু-ছাগলে। তখন শ্মশানের কাঠ নিয়ে এসে বেড়া দিতে শুরু করি।’’ দুখুর কাছে গাছ নিজের সন্তানের মতো। তাদের যেমন দুঃখকষ্টে আগলে রেখেছেন, গাছদেরও তেমনই যত্ন নেন দুখু। তিনি বলেন, ‘‘ওগুলো আমার সম্বল। কেউ গাছের ক্ষতি করলে খুব খারাপ লাগে। তবে যখন দেখি আমার লাগানো গাছের তলায় কেউ আশ্রয় নিয়েছে, তখন আনন্দে বুকটা ভরে যায়।’’
মূলত বাঘমুন্ডি থেকে সিন্দ্রী বা চড়িদা যাওয়ার রাস্তায় গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে দুখুর লাগানো সারি সারি গাছ। বাঘমুন্ডির বাসিন্দা উদয় কুমার বলেন, ‘‘দুখু আমাদের এলাকার গর্ব। শিক্ষিত মানুষজনও গাছের গুরুত্বের কথা বেমালুম ভুলে যান। আর এই নিরক্ষর বৃদ্ধ সাইকেলে চড়ে সারা দিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গাছের যত্ন নিচ্ছেন। নিজের লাগানো গাছ কেমন আছে দেখতে এ দিক-ও দিক ছুটে যাচ্ছেন।’’ এলাকার হাট-বাজার, শ্মশান, রাস্তার দু’পাশ— সব জায়গায় গাছ লাগিয়েছেন এই বৃদ্ধ। তাঁর সাইকেলে সবসময় থাকে একটি জলের পাত্র এবং গাছ লাগানোর উপকরণ। না, কোনও প্রত্যাশা নেই দুখুর। তিনি বলেন, ‘‘গাছ লাগাই বলে কোনও স্বীকৃতির আশা করিনি।’’ লক্ষ্যে অবিচল বৃদ্ধ কেবল চান গাছ লাগিয়ে যেতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy