তদন্ত: মই বেয়ে ওই বাড়ির ছাদে উঠছেন এক পুলিশকর্মী। ছবি: কল্যাণ আচার্য
এক বয়স্ক দম্পতির খুনের ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল পড়েছে লাভপুর থানার ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে। ওই দম্পতিকে ভারী কিছু দিয়ে মাথায় থেঁতলে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। পুলিশ জানায়, ওই দম্পতির নাম পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় (৭৮) ও স্বপ্না চট্টোপাধ্যায় (৬৮)। পূর্ণেন্দুবাবু পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরের একটি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন। স্বপ্নাদেবী ছিলেন প্রাক্তন রেলকর্মী।
খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বিস্তর। চুরির উদ্দেশ্যে খুন না ব্যক্তিগত আক্রোশবশত—তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। বাড়ি থেকে তেমন ভাবে কিছু খোয়া যায়নি বলেই পুলিশ জেনেছে। এমনকি আলমারিও ভাঙা বা ভাঙার চেষ্টা হয়নি। তবে, স্বপ্নাদেবীর গায়ের কিছু গয়না খোয়া গিয়েছে বলে ওই দম্পতির এক আত্মীয়ের দাবি। এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। পরিচিত কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।’’
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ণেন্দুবাবুর আসল বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা। ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে স্বপ্নাদেবীর বাপেরবাড়ি। পুরনো বাড়িটি টিনের চালের দোতলা। তার পাশে একতলা পাকা বাড়ি তৈরি করে বছর পাঁচেক ধরে সেখানেই থাকছিলেন ওই দম্পতি।
এ দিন সকালে সেই বাড়িতেই শোওয়ার ঘরের দু’টি খাটে তাঁদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দম্পতির বাড়িতে গ্রামের স্বদেশ ঘোষ, রাঁধুনি সুপ্রিয়া বাগদি এবং পরিচারিকা ফুলি বাগদির নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। স্বদেশ ওই দম্পতির দেখভাল করেন। তাঁর দাবি, ‘‘অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে এসে চা-মুড়ি খাই। তখন পিসি (স্বপ্নাদেবী) বলেন, শরীর খারাপ লাগছে শুয়ে পড়বেন। তার পরেই আমি চলে আসি।’’
ফুলি জানান, এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ এসে দেখেন গেটের তালা খোলেনি। পুজোর জন্য স্থানীয় এক জন মহিলা প্রতিদিন ফুলবেলপাতা দিয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য দিন গেট খুলে ফুল ঠাকুরঘরে রেখে দেন পিসিমণি। এ দিন দেখি, গেটেই ফুলের প্যাকেট ঝুলছে। ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে স্বদেশকে খবর দিই।’’ স্বদেশ বলেন, ‘‘আমি এসে ওদের দুটো ফোনে কল করতে গিয়ে দেখি দুটোই বন্ধ। পুলিশের খবর দিই। পুলিশ এসে ভিতরে ঢুকে দেখে ওই কাণ্ড!’’ সুপ্রিয়া বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সাড়ে ৮টা নাগাদ আমি দুধ আর চাউমিন করে দিয়েছিলাম। তার পর পিসির পায়ে তেল দিয়ে বাড়ি চলে যাই। আজ স্বদেশ আমার বাড়ি গিয়ে বলে ওদের ডেকেও সাড়া মিলছে না ।’’
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে গ্রামবাসীদের জটলা। লোহার গেটে ভিতর থেকে তালা ঝুলছে। বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে পুলিশ। তার পরে মই বেয়ে চিলেকোঠার খোলা দরজা দিয়ে নীচে নামেন পুলিশকর্মীরা।
পূর্ণেন্দুবাবুদের ঘরে ঢুকে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত বড় খাটে স্বপ্নাদেবীর নিথর দেহ। ছোটটিতে পূর্ণেন্দুবাবুর। দু’জনের বালিশেই চাপ চাপ রক্ত। স্বপ্নাদেবীর খাটের কাছে জানলার পাল্লা খোলা। তখনও ফ্যান চলছে। খাটের নীচে পড়ে রয়েছে একটি মোটা হাতুড়ি এবং ভারী বাটখারা।
কিছু পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ সুপার, এসডিপিও (বোলপুর) অভিষেক রায়, সিআই (নানুর) সুবীর বাগ, লাভপুরের ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ পুলিশকর্তারা। দুপুর দেড়টা নাগাদ দুর্গাপুর থেকে পুলিশ কুকুর গ্লোরিকে নিয়ে আসা হয়। সে পাঁচ বার ঘরের ভিতরে ঢোকে আর পিছনের দরজা, সামনের গেট দিয়ে ছোটাছুটির পরে পাড়ার একাংশ ঘুরে খেই হারিয়ে ফেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy