হাতে-হাত: রঘুনাথপুরে এক মঞ্চে তৃণমূলের নেতারা। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত দিন দলের পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছেন। কিন্তু তারপরেও জেলার পুরনো নেতা-কর্মীদের সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হত না বলে অভিযোগ ছিল। তবে শনিবার শুরু হওয়া ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতে তৃণমূলের বিধানসভা ভিত্তিক সম্মেলনে দলের ক্ষমতাসীন ও এত দিন পাত্তা না পাওয়া পুরনো নেতা-কর্মীদের এক সঙ্গে দেখা গেল। দল সূত্রের খবর, ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দলই ঠিক করে দিয়েছিল, কোন বিধানসভার সম্মেলনে কাদের কাদের ডাকা হবে। পুরনো কর্মীদের একাংশের দাবি, এত দিন উপেক্ষিত থাকলেও এ দিন ‘টিম পিকে’ আমন্ত্রণের তালিকা তৈরি করে দেওয়াতেই তাঁরা ডাক পেয়েছেন। এতে কিছুটা হলেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘পিকে-র দলের তৈরি করে দেওয়া তালিকা ধরেই এ দিন নেতা-কর্মীদের ডাকা হয়েছিল। যে কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জন্য পরে কর্মসূচি রয়েছে। তবে এ দিন অনেকেই এসেছিলেন। সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে চলার বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’
সামনেই পুরভোট। পরের বছরে বিধানসভা ভোট। অথচ গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দুই জেলার তিনটি কেন্দ্রই বিজেপির দখলে গিয়েছে। মানবাজার বাদে দুই জেলার সব বিধানসভা কেন্দ্রেও এগিয়ে বিজেপি। এই পরিস্থিতির জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অন্যতম বলে জেলা নেতৃত্ব স্বীকার করেছেন। তাই যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেতা-কর্মীদের এককাট্টা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে গত এক বছর ধরে। দুই জেলাতেই দলীয় পর্যবেক্ষক পাল্টানো হয়েছে। তাঁরা এলাকায় গিয়ে বৈঠক করে নেতা-কর্মাদের মধ্যে থাকা অসন্তোষ মেটানোর চেষ্টা করছেন। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দলের জেলা কমিটির বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে তিনি পুরনো কর্মীদের দলে ফিরতে আবেদন করেন।
দীর্ঘদিন পরে রঘুনাথপুর বিধানসভার তৃণমূলের সমস্ত নেতাকে এ দিন এক মঞ্চে দেখা যায়। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ির হাত ধরে স্লোগান দেন সাঁতুড়ির প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তী, নিতুড়িয়ার ব্লক সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব ও রঘুনাথপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের।
জেলা রাজনীতির পর্যপেক্ষকদের মতে, নিতুড়িয়ার ব্লক সভাপতি শান্তিভূষণের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিধায়ক পূর্ণবাবুর অনুগামীদের আকচাআকচি রয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বিধায়কের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে সাঁতুড়ির প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তীরও। আর রঘুনাথপুরে দলের কাউন্সিলরেরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পর থেকেই ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিধায়কের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সে সব অভিযোগ উড়িয়ে পূর্ণচন্দ্রবাবু জানিয়েছেন, সবাইকে এক সঙ্গে দলের কাজ করতে হবে। কর্মী সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ থাকবে না। সবাই মিলে দলের কাজকর্মে সমান ভাবে অংশ নিতে হবে।” পরে শান্তিভূষণবাবু বলেন, ‘‘আমরা সবাই তৃণমূলের অনুগত সৈনিক। সকলে মিলেই দলের কাজকর্মে সমান ভাবে অংশ নেব।”
বাঁকুড়া জেলার বারোটি বিধানসভা এলাকাতেও নতুন ও পুরনো কর্মীদের এক সঙ্গে সম্মেলনে দেখা গিয়েছে। রানিবাঁধ, ইন্দাস, বাঁকুড়া শহর প্রভৃতি জায়গাতেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের এক যোগে দেখা গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানাচ্ছেন, গোটা কর্মসূচিটি ভোট কৌশলী পিকের দলের নির্দেশ মেনেই হয়েছে। এমনকি, সব ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তা সরেজমিনে নজরও রেখেছিলেন ওই দলের প্রতিনিধিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy