দুবরাজপুরের পথিকৃৎ ময়দানে কাজল শেখ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
তারাপীঠের পর এ বার দুবরাজপুর। ফের জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের মুখে শোনা গেল, ‘‘জোড়া ফুল ছাড়া (জেলায়) অন্য কোনও ফুল ফুটবে না।’’ বুধবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুরের পথিকৃৎ ময়দানে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাজলের মুখে জেলাকে ‘বিরোধী-শূন্য’ করার হুঁশিয়ারি জেনে সবর বিরোধীরা। বিজেপির কটাক্ষ, দিবাস্বপ্ন দেখছেন কাজল। সিপিএমের প্রতিক্রিয়া, এক জন জনপ্রতিনিধির যদি গণতন্ত্রে আস্থা না থাকে, তা হলে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন।
গত ৩ নভেম্বর তারাপীঠ থানার বেসিক মোড়ে রামপুরহাট ২ ব্লক তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে কাজল বলেছিলেন, ‘‘বীরভূম জেলার বুকে জোড়া ফুল ছাড়া অন্য কিছু থাকবে না।’’ তাঁর সংযোজন ছিল, ‘‘২৪-এর নির্বাচনে গোটা টিম এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে বীরভূমের দু’টি আসনে দু’লক্ষাধিক ভোটে দলকে জয়ী করিয়ে দেখিয়ে দেব।’’ সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন বীরভূম কেন্দ্রের সাংসদ শতাব্দী রায়-সহ ব্লক ও জেলা নেতৃত্ব।
এ দিন দুবরাজপুরেও সেই কথা শোনা গলে কাজলের মুখে। দুবরাজপুর জেলার একমাত্র বিধানসভা, যা গত ভোটে তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছিল। চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই ব্যবধান অনেক কমেছে। কিন্তু, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বিশেষ করে দুবরাজপুর বিধানসভার অধীনে থাকা খয়রাশোলে দলকে চিন্তায় রেখেছে। তাই দুবরাজপুর শহরে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, দীপাবলি, ছটের শুভেচ্ছা জ্ঞাপক সভায় কাজলের বক্তব্য ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।
এ দিন কাজল বলেন, ‘‘আমরা আগামী দিনে এই দুবরাজপুর ব্লকে, দুবরাজপুর বিধানসভার বুকে দেখিয়ে দেব এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোড়া ফুল ছাড়া অন্য কোনও ফুল ফুটবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার দাদা, ভাই যাঁরা মঞ্চে আছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বলে যাচ্ছি, দুবরাজপুর বিধানসভার বুকে কম পক্ষে ৫০ হাজার ভোটের বেশি লিড দিয়ে দেখিয়ে দেব ২৪-এর নির্বাচনে।’’
এ দিন কাজল যখন এ কথা বলছেন, তখন সভায় উপস্থিত ছিলেন নানুরের বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাজি, তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়, পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে-সহ সমস্ত পুরপ্রতিনিধি, শহর সভাপতি স্বরূপ আচার্য-সহ শহরের সব নেতাই। কাজল আরও বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে আমাদের যিনি প্রার্থী ছিলেন, সেই শতাব্দী রায় কিন্তু সাংসদ হওয়ার পরে বার বার এখানে এসেছেন। কিন্তু ওঁর বিরুদ্ধে যিনি প্রার্থী ছিলেন, সেটা বাম হোক বা বিজেপি দেখা পেয়েছেন? পাবেন না। ভোটের বাজনা বাজলে আসবে। হেরে গেলে বিদায় নেবে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের কটাক্ষ , ‘‘কে নেতা হবেন তার নির্বাচন চলছে তো। তাই অনেকেই অনুব্রতর মতো কথা বলছেন।এটুকুই বলার গণতন্ত্রের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গণতন্ত্রে এমন অনীহা বিপজ্জনক।’’ অন্য দিকে, দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূল দিবাস্বপ্ন দেখছে। শাসক দলের যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি , তার সঙ্গে সাংসদ থেকে বিধায়ক থেকে কাজল শেখ সকলেই জড়িত। মানুষ জানেন, তৃণমূল মানেই চোর। তাই বিজয়া সম্মিলনীতে যে বার্তাই দেওয়া হোক, মানুষ ভুল বুঝবে না।’’
প্রসঙ্গত ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজো উদ্বোধনে করতে দুবরাজপুর শহরের পথিকৃৎ ময়দানে এসেছিলেন। বুধবার তৃণমূলের এই সভা তারই পাল্টা কি না তা নিয়ে চর্চা ছিল। কারণ, যে পুজো কমিটি বিজেপির ভিন্ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে পুজো উদ্বোধন করিয়েছিল তাদের সঙ্গে শাসক দলের সম্পর্ক বেশ ভাল। তার পরেও কেন এমন ঘটল সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিনের সভায় মলয়, জেলা পরিষদের খাদ্য ও সরবরাহ কর্মাধক্ষ্য অরুণ চক্রবর্তী বক্তব্যে সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে গিয়েছেন। কাজল ওই প্রসঙ্গে কিছু না বললেও, পথিকৃৎ ক্লাবের সম্পাদক অজিত সিংহকে মঞ্চে কাজলের পাশেদেখা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy