বান্দোয়ানের গুড়ুরে মাস্কহীন মুখই বেশি। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের জন্য তথা ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরগুলিতে এক সঙ্গে ভিড় করতে বারণ করেছেন। কিন্তু শুনছে কে? বৃহস্পতিবারও অধিকাংশ শিবিরগুলিতে যথারীতি মাস্ক-হীন মানুষের ঠাসা ভিড় দেখা গিয়েছে। দূরত্ববিধি মানাতে হিমশিম খেতে হয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের।
বিষ্ণুপুরের ভড়া ধনঞ্জয় দাস কাঠিয়াবাবা মহাবিদ্যালয়ের শিবিরে এ দিন গিয়ে দেখা যায়, ঠাসা ভিড়। প্রায় কারও মুখেই মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়াই শিবিরে দেখা যায় ভড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ঝুমা ঘোষকে। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘খুব গরম। তাই খুলে রেখেছি। কিন্তু লোকজনকে বার বার বলা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরেও কেন ভিড়ে এসেছেন? এক বধূর দাবি, ‘‘আগে আবেদনপত্র জমা করলে, আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ঢুকবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা জানা ছিল না।’’ যদিও ভড়ার অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি সহদেব বাগদি বলেন, ‘‘ভিড় না করতে মাইকে প্রচার করেছি। কেউ শুনছেন না।’’ পাত্রসায়রের এক বধূ বলেন, ‘‘শুনেছি, সামনের মাসের এক তারিখ থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ঢুকবে। তাই আগে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি।।’’
তবে এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত দাবি করেছেন, ‘‘শিবির আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সমস্ত পঞ্চায়েতের মানুষ যাতে ভিড় না করেন, সে জন্য সংসদ হিসেবে ডাকা হচ্ছে। ভিড় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’
বাঁকুড়া শহরের রাজেন্দ্রলাল হাইস্কুলের শিবিরেও ছিল ঠাসা ভিড়। সারদাপল্লির সুলেখা গড়াই বলেন, ‘‘সরকারি কাজ কবে বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাড়াহুড়ো করছি।’’ তালড্যাংরার পাঁচমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিবিরেও ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই।
পাঁচমুড়ার সুতপা কুম্ভকারের মতে, ‘‘অনেকেই মাস্ক না পরে শিবিরে ঘোরাঘুরি করছেন। ভিড় এড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে অফলাইনের পাশাপাশি, অনলাইন ব্যবস্থাও রাখা দরকার ছিল। তাতে করোনা-সংক্রমণের ভয় কমত।’’
সারেঙ্গা হাইস্কুল এবং সিমলাপালের মাচাতোড়া হাইস্কুলের শিবিরেও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর কাউন্টারের সামনে ঠাসা ভিড় ছিল। সারেঙ্গার মলিনা হাঁসদা বলেন, ‘‘সব কাজ ছেড়ে তাড়াহুড়ো করে এসে শুনছি, পরেও আবেদন নেওয়া হবে। অথচ, প্রচার নেই।’’ সারেঙ্গার ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুব্রত মিশ্র অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ভিড় না করতে প্রচার শুরু করেছি।’’ এসডিও (খাতড়া) মৈত্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিবিরের সংখ্যা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর যত দূর সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
পুরুলিয়া জেলাতেও হাতে গোনা কয়েকটি শিবির ছাড়া, অন্যত্র দূরত্ববিধি কার্যত শিকেয় ওঠে। যদিও প্রতিদিন বিভিন্ন শিবির পরিদর্শন করা জেলাশাসক রাহুল মজুমদার দাবি করেন, ‘‘শিবিরগুলিতে লোকজন হুড়োহুড়ি করে আবেদন জমা দিচ্ছেন এমনটা নয়। তবে যে পঞ্চায়েতে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে ভিড় এড়াতে শিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ঝালদা ১ ব্লকের মাড়ু-মসিনা পঞ্চায়েতের মাড়ু মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিবিরে ভিড় এড়াতে নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই আবেদনপত্র দেওয়া শুরু করে প্রশাসন। ভিড় কমেনি। বরং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা বেড়েছে। ওই শিবিরে আসা মহিলাদের অনেকেই জানান, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা তাঁরা জানেন না। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের আবেদন করার জন্য তাঁরা দেরি করতেও রাজি নয়। স্থানীয় আকুড়া গ্রামের দিপালী মাহাতোর কথায়, ‘‘সব মহিলারা ভিড় করছেন। আমি ঘরে বসে থাকলে বাদ পড়ে যেতে পারি। তাই এসেছি।’’
রঘুনাথরপুরের জিডি ল্যাং হাইস্কুলের শিবিরে হুড়োহুড়ি দেখা না গেলেও অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাবি, ‘‘লোকজনকে মাস্ক পরতে বললে পাল্টা জবাব এসেছে, এখন করোনার সংক্রমণ কমে গিয়েছে। অনেকে আবার জানিয়েছেন, তাঁদের দু’টি টিকা নেওয়া হয়েছে। তাই মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই!’’
বান্দোয়ানের গুড়ুর পঞ্চায়েতের চাঁদড়া গ্রামের শিবিরে ‘লক্ষীর ভান্ডার’-এর জন্য নির্ধারিত কাউন্টার মূল শিবির থেকে কয়েকশো মিটার দূরে একটি কমিউনিটি হলে চলছে। সে কারণে সেখানে ভিড় তেমন ছিল না। এমন কেন সব জায়গায় করা হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy