Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

নতুন পাইপ বসছে পাইকরে

পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার থেকে পাইকর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন হালদারপাড়ার মানুষজন। বৃস্পতিবার রাতে তৃষা ভাস্কর (৮) নামে এক বালিকার মৃত্যুতে এলাকায় ক্ষোভ ছড়ায়।

কর্মকাণ্ড: পানীয় জলের পাইপ বসাতে চলছে খোঁড়াখুড়ি। হালদারপাড়ায়।

কর্মকাণ্ড: পানীয় জলের পাইপ বসাতে চলছে খোঁড়াখুড়ি। হালদারপাড়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৪
Share: Save:

ডায়েরিয়ায় পরের পর গ্রামবাসীর আক্রান্ত হওয়া এবং এক বালিকার মৃত্যুর অভিযোগের পরেই নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। পাইকরের হালদারপাড়ায় শুরু হল পানীয় জল সরবরাহের নতুন পাইপ লাইন বসানোর কাজ।

শনিবার পাইকর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল হালদারপাড়ায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। জলপ্রকল্পের স্ট্যান্ড পয়েন্টেগুলির প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজও চলছে জোরকদমে। আপাতত বর্ধমান থেকে পরিস্রুত পানীয় জলের গাড়ি পাইকরের বিভিন্ন পাড়ায় জল সরবরাহ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ হাজারের মতো পরিস্রুত পানীয় জলের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে পাইকর গ্রামে। পাইকর গ্রামে প্রতিটি পুকুর, নর্দমা, রাস্তার ধারে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে। গ্রামে মেডিক্যাল অফিসার, আশাকর্মীরা হ্যালোজেন ট্যাবলেট, ওআরএস বিলি করছেন। প্রত্যেক পরিবারের সদস্যকে জল ফুটিয়ে, হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার থেকে পাইকর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন হালদারপাড়ার মানুষজন। বৃস্পতিবার রাতে তৃষা ভাস্কর (৮) নামে এক বালিকার মৃত্যুতে এলাকায় ক্ষোভ ছড়ায়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন মৃতার পরিবার ও গ্রামবাসী। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৩৩টি শয্যা থাকলেও ৬৫ জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী বর্তমানে ভর্তি। ফলে রোগীদের মেঝেয় বিছানা করে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে তাই ক্ষোভ রয়েছে মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দা দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা খুব কম। তা বাড়ালে গ্রামবাসী উপকৃত হবেন। ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। মেঝেয় রোগীদের ফেলে রাখা ঠিক নয়।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, নতুন করে বমি, পায়খানা নিয়ে মণ্ডলপাড়ার ছয় বাসিন্দা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এলে চার জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। দু’জনকে ভর্তি করে। মৃত বালিকার দিদি রামপুরহাট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের বাবা-মাও শুক্রবার সন্ধ্যায় ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছেন রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, শুক্রবার গ্রামে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হলেও এ দিন তারা যায়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। তবে বর্ধমান বা কলকাতার নাইসেডে পাঠানো জল এবং পায়খানার নমুনার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।’’

পাইকর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুল গনি বলেন, ‘‘আমরা গ্রামবাসীদের বলেছি, ওভারহেড ট্যাঙ্কের জল যেন কেউ না খান। গ্রামবাসীরা আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন জলাধার পরিষ্কার করা হয়নি। সরকার মাসে মাসে জল প্রকল্পের জলাধার, পাইপলাইন রক্ষাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলেও তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।’’

তাঁর আরও দাবি, অবৈধ ভাবে অনেকে বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে জলের সংযোগ নিয়েছেন। ফলে মূল পাইপলাইনে চাপ পড়ে তা ফেটে যাচ্ছে এবং সেখান থেকেই নোংরা বা জীবাণু ঢুকছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে সচেতন করা হবে বলে তিনি জানান।

পাইকরের কিছু যুবক হাসপাতালে রোগীদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, সে দিকে নজর রাখছেন। তাঁদেরই এক জন আকবর আলি মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা দুই বন্ধু টোটো ভাড়া করে মল্লিকপাড়া, সদপুরপাড়া, মালপাড়ায় পরিস্রুত জল বিলি করেছি। অনেক পরিবার আছে, যাদের পুরুষরা বাইরে কাজ করেন। বাড়িতে বাচ্চা নিয়ে মহিলারা আছেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Pipeline Water Paikor Diarrhoea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE