ক্ষোভ: বোঙাবাড়িতে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ।নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যায় বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (২৬)। কয়েক ঘণ্টা পরে পুরুলিয়া শহরের কর্পূরবাগানের বাসিন্দা অরিজিৎকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাশের গ্রামের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে বাঁচানো যায়নি তাঁকে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাব ইনস্পেক্টর বিবেকানন্দ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে অরিজিৎকে মেরেধরে খুন করার অভিযোগ ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তেতে থাকল কর্পূরবাগান ও লাগোয়া বোঙাবাড়ি গ্রাম। দফায় দফায় অবরোধ চলল পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে। বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী সীমা গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন সকালে বোঙাবাড়ি গ্রামের ১৩ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরে পুলিশ বোঙাবাড়ি গ্রাম থেকে দুই অভিযুক্ত কাশীনাথ মাহাতো ও অসিত গড়াইকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হলে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ধৃত দু’জনকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাওয়া গিয়েছে। তাদের জেরা করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বোঙাবাড়ি গ্রামের এক যুবকের বিরুদ্ধে এলাকার লোকেরা কয়েকদিন ধরে অসামাজিক কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলছিলেন। ঘটনাচক্রে সেই যুবক অরিজিতের ‘ঘনিষ্ঠ’। বুধবার রাতে বোঙাবাড়ির কয়েকজন বাসিন্দা ওই যুবককে মারধর করেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ঘটনার কথা অরিজিতকে জানান।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সে দিন সকাল ও দুপুরে দু’জনে বোঙাবাড়িতে গিয়ে মারধরে অভিযুক্ত কয়েকজনের বাড়িতে হুমকি দিয়ে আসেন। বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা পুলিশকে মৌখিক ভাবে তা জানালেও, লাভ হয়নি। রাত ৮টা নাগাদ ফের ওই গ্রামে ঢোকেন অরিজিৎ ও তাঁর সেই বন্ধু। অভিযোগ, তাঁরা হুমকি দিলে প্রতিবাদ করেন গ্রামের কয়েক জন। সেই সময়েই মারধর শুরু হয়। অরিজিৎ আটকা পড়ে গেলেও তাঁর সেই বন্ধু পালিয়ে যান।
রাত ১০টা নাগাদ খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বোঙাবাড়ি গ্রামে ঢোকার রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় অরিজিৎকে উদ্ধার করে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর কিছু পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ দিন বোঙাবাড়ি গ্রামে গেলে মহিলারা অভিযোগ করেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই ওরা দুই বন্ধুতে গ্রামে ঢুকে লোকজনকে বিরক্ত করত। প্রতিবাদ জানালে আমাদের হুমকি দিত।’’
যদিও তা মানতে চাননি নিহতের স্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘আমার স্বামী কোনও গোলমালে থাকতেন না। তাঁর কোনও শত্রুও ছিল না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বন্ধু বাড়িতে এসে তাঁকে ডেকে নিয়ে যান। পরে খবর পাই, বোঙাবাড়ির লোকেরা স্বামীকে পিটিয়ে মেরেছে। শুধু বন্ধুকে সাহায্য করতে গিয়েই খুন হতে হল ওঁকে।” ঘটনার পর থেকেই অরিজিতের ওই বন্ধু ও তাঁর পরিবার এলাকাছাড়া বলে জানা গিয়েছে।
খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সন্ধ্যায় কর্পূরবাগানের বাসিন্দারা পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুললেও ক্ষোভ কমেনি কর্পূরবাগানের লোকজনের। বোঙাবাড়ির বাসিন্দাদের প্রতিদিন কর্পূরবাগান হয়ে পুরুলিয়া শহরে নানা কাজে যেতে হয়। বোঙাবাড়ির বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন সকালে কর্পূরবাগানে তাঁদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়।
প্রতিবাদে বোঙাবাড়ি গ্রামের সামনে সকাল প্রায় অটটা থেকে ঘণ্টা তিনেক রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের ভিড় ছিল বেশি। সকালে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে গেলে তাদেরও আটকে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গ্রামে ঢুকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে ধরে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy