Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাতিল নোটেই কর নিয়ে ভরছে পুরসভার ভাঁড়ার

দোকানে নয়, বাজারেও নয়। জমিয়ে রাখা যাবে না বাড়ির গোপন কুঠুরিতেও। তাই বাতিল পাঁচশো ও হাজার টাকা নোট নিয়ে অনেকেই যখন দুর্ভাবনায় পড়েছিলেন, তখন সরকার জানিয়ে দেয়, ওই টাকায় পেট্রোলপাম্প, হাসপাতালের মতো পুরসভায় কর বাবদও দেওয়া যাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

দোকানে নয়, বাজারেও নয়। জমিয়ে রাখা যাবে না বাড়ির গোপন কুঠুরিতেও। তাই বাতিল পাঁচশো ও হাজার টাকা নোট নিয়ে অনেকেই যখন দুর্ভাবনায় পড়েছিলেন, তখন সরকার জানিয়ে দেয়, ওই টাকায় পেট্রোলপাম্প, হাসপাতালের মতো পুরসভায় কর বাবদও দেওয়া যাবে। এরপরেই বাতিল নোটে পুরকর জমা করতে ভিড় জমে যায় পুরসভাগুলিতে। কয়েকদিনে লাফিয়ে বেড়ে যায় পুরকর আদায়ের পরিমাণও।

পুরুলিয়ার তিন পুরসভাতেই কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও বাঁকুড়ায় তেমন সাড়া মেলেনি।

পুরুলিয়ার বিভিন্ন পুরসভাগুলি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই ঘোষণা ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা লক্ষাধিক টাকার করও রাতারাতি জমা পড়েছে! তাই নোট বাতিলে আখেরে লক্ষ্মীলাভই হচ্ছে পুরসভাগুলির।

পুরুলিয়া পুরসভা সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর— এই দুই মাসে মিলিত ভাবে যে পরিমাণ কর জমা পড়েছিল, নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই প্রায় ওই পরিমাণ কর জমা পড়ে গিয়েছে! ঘটনা হল অনেকেই বাতিল হওয়া নোটে দীর্ঘ সময়ের বকেয়া কর মিটিয়ে দিচ্ছেন। রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাতিল হওয়া পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটে পুরসভা কর নিতে পারবে সিদ্ধান্ত জানার পরেই শহরে মাইকে জোর প্রচার চালানো হয়। তারপর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কর জমা পড়ছে। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ী লক্ষাধিক টাকার বকেয়া কর জমা করেছেন।”

প্রত্যাশিত কর আদায়ে সব সময়েই পিছিয়ে থাকে জেলার তিন পুরসভা পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদা। জোর করে বকেয়া কর আদায় করতে গেলে তার প্রভাব পুর নির্বাচনে পড়বে, মূলত এই আশঙ্কাতেই কর আদায়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হয় না অধিকাংশ পুরসভা। পুরসভাগুলি স্বশাসিত হওয়ায় পুরকর থেকেই এলাকার বেশকিছু উন্নয়ন করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আদায় হওয়া পুরকর ঠিকা শ্রমিকদের মজুরি মেটাতেই বেরিয়ে যায়। তবে বাতিল নোট জমা করার হুড়োহুড়িতে আখেরে পুরসভার আর্থিক স্বাস্থ্য কিছুটা হলেও ফিরবে বলে মনে করেছেন পুরকর্মীরা।

বস্তুত পুরসভা কর আদায়ে মূলত জোর দেয় আর্থিক বছর শেষ হওয়ার সময়ে। ফলে যে কোনও বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি কর জমা পড়ে। তারপর থেকে কর আদায়ের হার কমতে থাকে। অক্টোবর ও নভেম্বর মাস উৎসবের মরসুম হওয়ায় এই মাসগুলিতে কর জমা দেওয়ার হার থাকে তলানির দিকে। কিন্তু বাতিল নোটে পুরকর নেওয়া শুরু হওয়ায় ঝিমিয়ে থাকা নভেম্বর মাসে কর জমা দেওয়ার হার বহুগুণ বেড়েছে।

পুরুলিয়া পুরসভার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসে পুরুলিয়ায় মোট কর জমা পড়েছিল প্রায় ৬ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। আর নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই (২১ নভেম্বর অবধি) কর জমা পড়েছে ৬ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা। প্রায় একই ছবি রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রেও। নোট বাতিলের ঘোষণার পরের দিন থেকে সোমবার পর্যন্ত কর জমা পড়েছে ৪৮ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা। রঘুনাথপুর ও পুরুলিয়ার কিছু বাসিন্দার কথায়, ‘‘বকেয়া কর জমা তো এক সময়ে দিতেই হতো। তাই বাতিল নোট ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা দেওয়ার হ্যাপা পোহানোর চাইতে বকেয়া করা পুরসভাতে জমা করেছি।”

তবে ঝালদার ক্ষেত্রে কর জমা পড়ার হারটা বাড়লেও অপর দুই পুরসভার চাইতে অনেকটাই কম। ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘বাতিল নোটে কর জমা নেওয়া হবে বলে ঘোষণার পরে কর জমার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।” তবে গোড়ার দিকে কিছুদিন মূলত খুচরোর সমস্যা থাকায় বাতিল নোটে কর জমা নিতে পারেনি পুরসভাগুলি।

যদিও বাঁকুড়া জেলার পুরসভাগুলিতে তেমন সাড়া মেলেনি। বাঁকুড়া পুরসভা জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরেও তাঁরা পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটেই কর জমা নিচ্ছেন। চলতি নভেম্বর মাসে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট কর জমা পড়েছে ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর জমা পড়েছে ৫ লক্ষ ৫৩ হাজার। প্রায় সব টাকাটাই জমা পড়েছে বাতিল নোটে। এই পুরসভায় গত তিন মাসের জমা পড়া করের তুলনায় এ বারের জমা পড়া অঙ্কের তেমন কোনও পার্থক্য নেই। গত অগস্ট মাসে ৮ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বরে ১০ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা ও পুজোর মাস অক্টোবরে ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা কর বাবদ জমা পড়েছিল বাঁকুড়া পুরসভায়। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের কথায়, “আমরা আশা করেছিলাম নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের জেরে বাতিল হওয়া নোটে পুরকর মেটানোর হিড়িক পড়বে। তবে তেমনটা আর হল কই?’’

উল্লেখযোগ্য কর জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে বিষ্ণুপুর পুরসভাও। সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি বানানো এবং বাড়ি-বাড়ি জলের সংযোগ নেওয়ার জন্য পুরসভা সবাইকে আগে পুরকর জমা করতে বলেছিল। তাতে গত দু’মাসে আমাদের রের্কড কর আদায় হয়েছে। তাই বকেয়া কর থাকার পরিমাণ বিশেষ নেই। সে কারণে বাতিল নোট দিয়ে পুরকর মেটাতে এ বার বিশেষ সাড়া দেখছি না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, নোট বদলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পর প্রায় ২ লক্ষ টাকা কর জমা পড়েছে।

বাঁকুড়া পুরসভা জানিয়েছে, বাতিল হওয়া নোটে কর নেওয়া হবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। পুরুলিয়াতেও একই দিনক্ষণ জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার কর দফতরের প্রধান করণিক সমীর মুখোপাধ্যায়। কিন্তু রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান জানাচ্ছেন, তাঁরা ৩০ ডিসেম্বর অবধি বাতিল নোটে কর জমা নেবেন। এ ক্ষেত্রে ভবেশবাবুর যুক্তি, কেন্দ্র সরকারের ঘোষণা মতো ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরানো নোট ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া যাবে। তাই আমরাও ওইদিন পর্যন্ত পুরানো নোটে কর জমা নিয়ে ওইদিনই ব্যাঙ্কে জমা করে দেব। বাতিল নোটে কর নেওয়ার সময়সীমা বাড়ালে আরও বেশি কর আদায় হবে বলে মনে করছে রঘুনাথপুর পুরসভা।

অন্য বিষয়গুলি:

Banned notes Municipality fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE