মশা মারতে ওষুধ ছড়াচ্ছে পুরুলিয়া পুরসভা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
একের পর এক ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে পুরুলিয়া শহরে।
পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডে একের পর এক ডেঙ্গি রোগীর খোঁজ মিলছে। ইতিপূর্বে ওই এলাকায় এক দম্পতি ও এক শপিং মলের কর্মীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণুর হদিস পাওয়া গিয়েছিল। শুক্রবার সেই এলাকায় বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়া-সহ তিন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেল। আক্রান্তদের মধ্যে বাড়ি মালিক ও তাঁর ছেলেকে শুক্রবার দুপুরে শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁরা দেশবন্ধু রোডের মহালক্ষ্মী বাগান লেনের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার এই এলাকা সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা হয়েছিল। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিয়ে তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরতে গিয়ে দেখেন, যত্রতত্র জল জমে রয়েছে। আর সেই জলেই কিলবিল করছে ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার লার্ভা! হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ি বাদ দিলে অধিকাংশ জায়গাতেই দেখা গিয়েছে পরিবারের একাধিক ব্যক্তি জ্বরে ভুগছেন।
সে দিনই একটি বাড়িতে গেলে বাড়ির গিন্নি জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী ও ছেলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। কিন্তু, পরিদর্শক দল যখন সেখানে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে অসুস্থেরা বাড়িতে ছিলেন না। তাঁরা চিকিৎসকের কাছে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই বাড়ির নীচের তলায় ভাড়াটে এক শিক্ষিকাও জ্বরে ভুগছিলেন বলে তাঁরা জানতে পারেন। কিন্তু, ওই মহিলা বাড়িতে না থাকায় তাঁরও চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও নথি স্বাস্থ্যকর্তারা দেখতে পাননি। তবে ওই বাড়ির ছাদে পাখির খাঁচার জলের পাত্রে এডিসের লার্ভা মিলেছিল। শুক্রবার জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্র বলেন, ‘‘ওই বাড়ির তিন জনের রক্তেই ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে।’’
এ দিন ওই বাড়িওয়ালা ও তাঁর এক ছেলেকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। আক্রান্তের ছেলে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথমে ভাই, তারপর বাবা জ্বরে অসুস্থ হয়। দু’জনেরই প্রায় একই উপসর্গ। জ্বরের সঙ্গে শরীরে যন্ত্রণা। এরই মধ্যে বাড়ির উল্টোদিকের বাসিন্দা এক দম্পতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন শুনেই আর ঝুঁকি নিইনি। রক্ত পরীক্ষা করাতে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ধরা পড়ে বাবা ও ভাইয়ের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে। তাঁদের নার্সিংহোমে ভর্তি করেছি।’’
তাঁদের ভাড়াটের স্বামী জানান, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। দুই বাড়ির লোকজনই জানিয়েছেন, ছোট-বড় পাত্রে জমে থাকা জল যে এ ভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে, সেটাই তাঁদের ধারণায় ছিল না।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই এলাকার উপর বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলা হয়েছে পুরসভাকে। কারণ এই এলাকা চলতি সপ্তাহে ছ’জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। গত বছর দক্ষিণ দমদম পুরসভার মধুগড় এলাকায় কয়েকশো বাসিন্দার জ্বর হয়েছিল। বহু লোক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। বীরভূমের দুবরাজপুর পুরসভার একটি ওয়ার্ডেও প্রথমে অনেকের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। পরে তা আশপাশের এলাকায় ছড়ায়। তাই পুরসভাকে আরও সক্রিয় হতে দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
এ দিন পুরসভার প্রতিনিধিরা এই এলাকায় গিয়ে যেখানে জল জমে রয়েছে সেখানে রাসায়নিক ছড়ান। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এই রাসায়নিক জলের উপরে ভেসে থেকে একটি স্তর তৈরি করে। যার ফলে ওই জলে থাকা এডিস মশার লার্ভা অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। তবে এই রাসায়নিক ছড়ানোর থেকে সব থেকে জরুরি জল জমতে না দেওয়া। তাহলেই লার্ভা জন্মাতে পারে না।’’ তিনি জানান, ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই এলাকায় যে সমস্ত জায়গায় জল জমে রয়েছে শনিবার থেকেই সেই জায়গায় ব্লিচিং ছড়ানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy