Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
দাবি বাঁকুড়া পুলিশের

টাকা ফেরত পাচ্ছেন প্রতারিতরা

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারকের ফোনে এটিএম কার্ডের গোপন তথ্য জানিয়ে গত ছয় মাসে জেলায় ৭৩ জন টাকা খুইয়েছেন। যদিও বাঁকুড়া সাইবার ক্রাইম সেলের তৎপরতায় প্রতারিতদের ৫২ জনকেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। যার মোট অঙ্কটা প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৩:১০
Share: Save:

টিভিতে বিজ্ঞাপন, ব্যাঙ্ক বা রাস্তার পাশে হোর্ডিং—মানুষকে সচেতন করার প্রচেষ্টাই সার। প্রতারকের ফাঁদে পড়ে ফোনে এটিএম কার্ড সংক্রান্ত গোপন তথ্য দিয়ে টাকা খোয়ানোর ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না জেলায়। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই জেলা জুড়ে বিভিন্ন থানায় এ নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে স্বস্তির কথা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারিতদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছে বাঁকুড়া পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারকের ফোনে এটিএম কার্ডের গোপন তথ্য জানিয়ে গত ছয় মাসে জেলায় ৭৩ জন টাকা খুইয়েছেন। যদিও বাঁকুড়া সাইবার ক্রাইম সেলের তৎপরতায় প্রতারিতদের ৫২ জনকেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। যার মোট অঙ্কটা প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “প্রতারিত ব্যক্তি যত দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন টাকা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও ততই বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতারক গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিজের ই-ওয়ালেটে ট্রান্সফার করছে। তারপর সেই ই-ওয়ালেট থেকে বিভিন্ন সংস্থায় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে ফেলছে।”

সুখেন্দুবাবু জানান, ই-ওয়ালেট থেকে টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার আগে যদি প্রতারিত ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই টাকা ফেরানো যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতারিত ব্যক্তিকে এটিএম কার্ডের জেরক্স কপি, ব্যাঙ্কের পাস বইয়ের আপডেটেড কপি এবং টাকা উঠে যাওয়ার পরে গ্রাহকের মোবাইলে ব্যাঙ্ক যে মেসেজ পাঠায় সেটি নিয়ে থানায় যোগাযোগ করতে হবে।

ঠিক কী ভাবে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলে প্রতারকেরা?

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, প্রতারণার একটি ধরণ হল প্রতারকের ই-ওয়ালেটে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা ট্রান্সফার করে নেওয়া। এই সমস্ত ক্ষেত্রেই টাকা ফেরত পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। তাঁরা জানান, ব্যাঙ্কে আধার লিঙ্ক করে দেওয়া বা ইন্টারনেটে জিনিসপত্র কেনাবেচা করে এমন কোনও বড় সংস্থার তরফে গিফট দেওয়ার টোপ দিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের ফোন করে প্রতারকেরা। গ্রাহকেরা তাঁদের বিশ্বাস করে এটিএম কার্ডের নম্বর ও কার্ডের মেয়াদ, সিভিভি নম্বর দিয়ে ফেলেন অনেক সময়ে। গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ওই সব তথ্য জানার পাশাপাশি নিজেদের ই-ওয়ালেটে টাকা পাঠাবার প্রক্রিয়াও শুরু করে দেয় প্রতারকেরা। গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারকের ই-ওয়ালেটে টাকা পাঠাবার ঠিক আগের মুহূর্তে গ্রাহকের ফোনে মেসেজ করে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠায় ব্যাঙ্ক। ওই পাসওয়ার্ড বলে ফেললেই টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায়।

অনেক সময়ে নিজের ই-ওয়ালেটে টাকা পেয়ে সেই টাকায় মোবাইল রিচার্জ বা বিভিন্ন সংস্থা থেকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করে নেয় প্রতারক। তবে অনেক ক্ষেত্রেই টাকা খরচ করতে দেরি হয়। ই-ওয়ালেট থেকে টাকা বেরিয়ে যাওয়ার আগে প্রতারিত ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাঁকুড়া পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা ওই ই-ওয়ালেট সংস্থাকে ই-মেল করে ঘটনাটি জানিয়ে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা রিফান্ড করানোর ব্যবস্থা করে থাকে। এই পদ্ধতিতেই সম্প্রতি বহু প্রতারিত ব্যক্তির টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছে বাঁকুড়া পুলিশ। সুখেন্দুবাবু বলেন, “মানুষকে সচেতন করতে আমরা নানা ভাবে প্রচার চালাচ্ছি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও গ্রাহকদের বারবার এটিএমের গোপন তথ্য কাউকে জানাতে নিষেধ করছে।”

তবে সমস্ত ক্ষেত্রেই যে ই-ওয়ালেটে টাকা ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে প্রতারণা হয় এমনটাও নয়। প্রতারণার আরও বেশ কিছু জটিল পদ্ধতি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে চট করে টাকা ফেরত পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।

সব মিলিয়ে গ্রাহকের সচেতনতাই একমাত্র এই ঘটনা রুখতে পারে বলেই মত সুখেন্দুবাবুর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE