বৈঠকে: পুরুলিয়া জেলাপরিষদে খাদ্যমন্ত্রী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
রেশনের প্যাকেটের আটার মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। এ বার এই অভিযোগ মেনে নিলেন খোদ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও।
সোমবার বিকেলে তিনি পুরুলিয়ায় জেলায় গণবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলাশাসক, বিধায়ক, খাদ্য দফতরের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, গণবন্টন ব্যবস্থায় যুক্ত রেশন ডিলারদের প্রতিনিধি, ডিস্ট্রিবিউটর্স, চালকল মালিকদের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ দিন বৈঠকে আমি আটা নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ পেয়েছি। জেলায় যে পাঁচটি মিল থেকে রেশন ডিস্ট্রিবিউটরদের আটা সরবরাহ করা হয়, তাদের মধ্যে শিবশঙ্কর ও লক্ষ্মীনারায়ণ নামে দু’টির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এই মিল থেকে যে আটার প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে, তার গায়ে কোনও ব্যাচ নম্বর নেই। কবে আটা তৈরি করা হয়েছে, নেই সেই তারিখের উল্লেখও। অথচ এই আটা ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন যুক্ত। তাই তৈরির এক মাসের মধ্যে তা ব্যবহার করতে হয়। অথচ এই তথ্য প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ করা নেই।’’
তিনি জানান, এ দিনের বৈঠকে ওই দুই আটা মিল কর্তৃপক্ষকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে তাদের এই বিষয়টি সংশোধন করতে হবে। না হলে দফতর আটার বদলে গ্রাহকদের গম দেওয়ার বিষয়টিই পুনর্বিবেচনা করবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে গম দিলে তা ভাঙাতে তাঁদের সমস্যা হয়। খরচও রয়েছে। তাই সরকার গরিব মানুষকে আটাই দিতে চায়। সে কারণেই এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে।’’
পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন ব্লকের গ্রাহকদের কাছ থেকে আটার প্যাকেট সংগ্রহ করে বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো আটার প্যাকেটের গায়ে তৈরির তারিখের উল্লেখ কেন নেই, এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ নিয়ে তিনি বিধানসভাতেও সরব হয়েছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশাসনের কাছে তদন্তও দাবি করেন।
তার পরেই জেলা খাদ্য দফতর পরিদর্শনে নেমে দেখে, বিরোধী বিধায়কের অভিযোগ সত্যি। তেমন কিছু আটার প্যাকেট তারা বাজেয়াপ্তও করে।
এ দিন মন্ত্রী জানান, বাকি যে তিনটি মিল থেকে আটা নেওয়া হয়, সেখানেও নজরদারি চালানো হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার জেলার আধিকারিকেরা নয়, কলকাতা থেকে দফতরের আধিকারিকেরা আচমকা এই মিলগুলিতে হানা দেবেন। আটার গুণমানের সঙ্গে কোন আপোস করা হবে না।’’
মন্ত্রী যে দুই আটা মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, তাদের একটির মালিক সন্তোষ কাটারুকা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুরুলিয়ার আটা প্রস্তুতকারক সংগঠনের পক্ষ সর্বেশ পোদ্দার দাবি করেন, ‘‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই আটার প্যাকেটের গায়ে প্রস্তুতের তারিখের উল্লেখ করা যায় না। তবে মন্ত্রী আমাদের এক মাস সময় দিয়েছেন। আমরা তার মধ্যেই এই সংশোধন করব।’’ এর আগেও তো সংশোধনের প্রসঙ্গ এসেছে। এত দিন কেন তা করা হয়নি? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর অবশ্য তাঁর কাছে মেলেনি।
একই সঙ্গে জেলার দুই শতাধিক রেশন ডিলার নিয়োগের কথাও এ দিনের বৈঠকের পরে জানান খাদ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এই জেলায় এত দিন বেশ কিছু রেশন ডিলার সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন। তাঁদের এলাকার গ্রাহকদের পাশের ডিলারের কাছ থেকে রেশনের জিনিসপত্র তুলতে যেতে হয়। এ দিন মন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা দূর থেকে তাঁদের খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে হয়। আমরা ঠিক করেছি, সাসপেন্ড হয়ে থাকে রেশন ডিলারদের জায়গায় নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে। মোট ২৩০ জন নতুন রেশন ডিলারের পাশাপাশি জেলায় একই সঙ্গে আরও দশ জন ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করা হবে।’’ তিনি জানান, নতুন রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের জন্য দফতর বিজ্ঞাপন দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy