Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজ্যপালের মন্তব্যে মন্ত্রীর পাল্টা

সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘জাতীয় সড়ক তো ঠিকই ছিল। রাজ্য সড়কও ঠিকই ছিল, তবে কিছু জায়গায় ঝটকা খেতে হয়েছে!’’ 

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

জাতীয় সড়ক বললেই চকচকে মসৃণ সাদা ডিভাইডার দেওয়া রাস্তার কথা চোখে ভাসে, যেখানে গাড়ি চলে সাঁই সাঁই করে। তবে, বীরভূমের বুক চিরে যাওয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ থেকে মুর্শিদাবাদের মোরগ্রাম পর্যন্ত অংশে কেউ যদি একবার যাতায়াত করেন, তা হলে জাতীয় সড়কের চেনা ধারণাটা বদলে যেতে বাধ্য। এতটাই বেহাল সেই সড়ক!

শুক্রবার সকালে সেই জাতীয় সড়কের উপর দিয়েই বীরভূম হয়ে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা পৌঁছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের মন্তব্য, ‘‘জাতীয় সড়ক দিব্যি ভাল। তবে, রাজ্য সড়ক খুব খারাপ।’’ এর কয়েক ঘণ্টা আগে সিউড়ির সার্কিট হাউসেও রাজ্যপালের মুখে শোনা গিয়েছে জাতীয় সড়কের প্রশংসা। সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘জাতীয় সড়ক তো ঠিকই ছিল। রাজ্য সড়কও ঠিকই ছিল, তবে কিছু জায়গায় ঝটকা খেতে হয়েছে!’’

বীরভূমের যে জাতীয় সড়কের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে নিত্য প্রতিবাদ, অবরোধ, অশান্তি, দুর্ঘটনা— সেই খারাপ রাস্তাও কেন নজরে পড়ল না রাজ্যপালের, প্রশ্ন তুলেছে শাসক-শিবির। তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এই জেলার বাসিন্দা, রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, ‘‘যে পথে বীরভূমের উপর দিয়ে রাজ্যপাল গিয়েছেন, সেই পথের দুবরাজপুরের পর থেকে পুরোটাই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সংস্কারের অভাবে অত্যন্ত বেহাল সেই রাস্তা। তার পরও উনি কী ভাবে বললেন জাতীয় সড়ক ভাল, জানি না।’’ আশিসবাবুর সংযোজন, ‘‘পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক অনেক ভাল। কারণ সেটা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। জাতীয় সড়কের মতো কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে নয়।’’

ফরাক্কা যাওয়ার পথে এ দিন সকালে সিউড়ি সার্কিট হাউস কিছুক্ষণ বিশ্রামের জন্য থেমেছিলেন। সেখান থেকে বেরোনের সময় সংবাদমাধ্যমের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের হাল নিয়ে তাঁর মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। জেলার তৃণমূল শিবিরের কটাক্ষ, ‘‘আসলে নরেন্দ্র মোদীর কোনও কিছুই খারাপ দেখেন না এ রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল। যত খারাপ, যত খুঁত শুধু রাজ্য সরকারের। বেহাল জাতীয় সড়কে ঝাঁকুনি খেয়ে, ধুলো দেখেও তিনি তাই রাজ্য সড়ককে দুষছেন।’’

ঘটনা হল, সংস্কারের অভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। অসংখ্য ছোট-বড়-মাঝারি খানাখন্দে ভরা এই রাস্তা। কোথাও আবার কিলোমিটার জুড়ে পিচের অস্তিত্বই নেই। তাতে বর্ষার জল জমে এক রকম বিপত্তি। আবার জল শুকিয়ে গেলেই ধুলো উড়ে মরণফাঁদ তৈরি হচ্ছে। এমন এক জনকেও পাওয়া যাবে না, যিনি এই রাস্তায় যাতায়াত করার সময় বিরক্তি প্রকাশ করেন না। নিত্যযাত্রীরা ভয়ে কাঁটা থাকেন, ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছব তো! বেহাল রাস্তায় প্রতি দিনই একাধিক ট্রাক-লরি-ডাম্পার বা ভারী যান খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। যার পরিণতি— যানজট আর পথ দুর্ঘটনা। বেহাল রাস্তায় ভারী যান যাতায়াতে ধুলো ওড়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই সিউড়ি শহর লাগোয়া জাতীয় সড়কের পাশেই থাকা সরকারি পলিটেকনিক, আইটিআই এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা অবরোধ করেছিলেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ফরাক্কা যাওয়ার পথে বীরভূমের যে ১৩০ কিলোমিটার রাস্তার উপর দিয়ে যেতে হয়েছে, তার মধ্যে ৯৫ কিমি অংশই জাতীয় সড়কের অধীন। মোটের উপরে ২০ কিমি চলাচলের যোগ্য থাকলেও, বাকি রাস্তার অবস্থা করুণ।

নলহাটির নাকপুর চেকপোস্টে বীরভূমে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক শেষ হচ্ছে। নলহাটির নগরা নোড় থেকে নলহাটি পর্যন্ত ৫ কিমি রাস্তা সবেচেয় খারাপ। রাজ্যপাল যাবেন বলে নলহাটি পুরসভা ২ কিমি অংশে জল ছিটিয়ে ছিল। কিন্তু তাতেও ধুলো ঢাকেনি। এ দিন নলহাটি ঢুকে তা টের পেয়েছেন রাজ্যপাল নিজেও।

রাজ্যপালের মন্তব্যকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে সেই কারণেই। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য রাস্তা খারাপের জন্য অতিরিক্ত পাথর-বালি বোঝাই যান চলাচলকে দায়ী করে দাবি করেছেন, এটা রোখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারেরই। তবে ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই রাস্তা সংস্কারে হাত পড়বে।

রাজ্যপালের পথ-সফর অন্তত এই আশ্বাসটুকু আদায় করতে পেরেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar Asish Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy