সিউড়ির তিলপাড়ায় রামকৃষ্ণ শিল্পবিদ্যাপীঠে। নিজস্ব চিত্র
হস্টেলের ঘরগুলির তালা ভেঙে কেউ যেন তাণ্ডব চালিয়েছে। বইপত্র-সহ নানা জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ঘরময়। বিছানাপত্র সব ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রত্যেকটি আলমারির তালা ভাঙা। আবাসিকদের দাবি, উধাও হয়ে গিয়েছে পোশাক, গুরুত্বপূ্র্ণ নথি, বইখাতা থেকে টাকা পয়সা যা ছিল সবই।
বুধবার সকালে এমন ছবি দেখা যায় সিউড়ির তিলপাড়ায় রামকৃষ্ণ শিল্পবিদ্যাপীঠ নামক সরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রী নিবাসে। ওই ছাত্রীনিবাসটিকে এই মুহূর্তে নিভৃতবাস কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে এমন ঘটনায় চরম বিপদে পড়েছেন ছাত্রীরা। তাঁদের প্রশ্ন, প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা সত্বেও কীভাবে এমন কাণ্ড ঘটল? কেনই বা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের জিনিসপত্র আগে সরিয়ে নিতে বললেন না? গুরুত্বপূর্ণ নথি খোয়ানোর পর এখন তাঁরা কী করবেন তা ভেবেই দিশাহারা তাঁরা। সরাসরি না বললেও নিভৃতবাস কেন্দ্রে থাকা আবাসিকদের একাংশই এমনটা ঘটিয়েছে মনে করছে প্রশাসন। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে ঘটনার বিবরণ দিয়ে সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘এখনও লিখিত অভিযোগ
পাইনি। অভিযোগ হলে পুলিশ যথাযথ তদন্ত করবে।’’ কলেজ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা-প্রকোপ বাড়তেই সরকারি নির্দেশে সিউড়ির ওই সরকারি কলেজটি ১৯ মার্চ থেকে ১৫দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২৪ মার্চ লকডাউন শুরু হতেই জেলা প্রশাসন ওই কলেজটির ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসের যে রুমগুলি খালি ছিল, সেগুলিকে প্রথমে ত্রাণ শিবির ও পরে কোয়রান্টিন সেন্টার হিসেবে নেয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বীরভূমকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করা ভিন জেলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা ও পরে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা দফায় দফায় ওখানে ছিলেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর এই মুহূর্তে ৫৮ জন সেখানে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত দুশোর বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ওখানে থেকেছেন। হোস্টেলে তাঁদের জন্য বরাদ্দ ঘরগুলির তালা ভেঙে যে এমন কাণ্ড ঘটেছে সেটা মঙ্গলবার রাতে জানতে পারেন ছাত্রীরা। তারপর থেকেই প্রবল উৎকণ্ঠায় ভুগতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। বুধবার সকালেই তিন ছাত্রী হস্টেল পৌঁছে নিজেদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
সিভিল তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী (সিভিল) বীথি সাধু, ইলেকট্রিক্যাল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কস্তুরী মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘তালা ভাঙা ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে নথিপত্র পড়ে থাকতে দেখে এক আবাসিকই মঙ্গলবার দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ফোন করে অবস্থার কথা জানান। বলেন তাঁদের জিনিস নিয়ে যেতে। এরপরই হস্টেলের আমরা ২০ জন ছাত্রী খবর পাই।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘এ দিন এসে দেখি আমাদের সব কিছু নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে গিয়েছে।’’ ছাত্রীরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণা হয়েছিল। তখন মাত্র ১৫ দিনের ছুটি ভেবে অনেকেই সব গুছিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। যাঁরা এখানে ছিলেন তাঁরা এমনটা কী করে করলেন ভেবে হতবাক ছাত্রীরা।
মহকুমাশাসক (সিউড়ি) রাজীব মণ্ডল বলেন, ‘‘ছাত্রী হস্টেলের তালা ভেঙে তাঁদের জিনিস নষ্ট করা ও চুরির অভিযোগ পেয়েছি। এ টুকু বলতে পারি যে বা যাঁরাই এখানে ছিলেন তাঁরা কেউ-ই অজ্ঞাতপরিচয় নয়। সকলেরই পরিচয় প্রশাসনের কাছে আছে। যে বা যারা এমন করেছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই বিডিও (সিউড়ি ১) তদন্ত শুরু করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy