রাজেশ ওরাংয়ের ছবির সামনে মা মমতাদেবী। নিজস্ব চিত্র
আনাগোনা করছেন অনেকে। তবু সবই যেন একেবারে নিস্তব্ধ। মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে নিহত সেনা জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের শেষকৃত্যের পর থেকেই সেই নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে তাঁর বাড়িতে। পরিজনেরা যেন শোকে পাথর। সেই ছবিই দেখা গেল সোমবার, রাজেশের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিনও।
রাজেশের মা-বাবার ইচ্ছেতেই এ দিন শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাঁরা চেয়েছিলেন, যাঁরা প্রথম থেকে তাঁদের পরিবারের পাশে ছিলেন তাঁদের আমন্ত্রণ করতে। তাঁদের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতেই এই আয়োজনে এগিয়ে আসেন প্রশাসন, স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক নেতারা-সহ সকলেই। গ্রামবাসী, প্রশাসনিক কর্তা, নেতৃবৃন্দ মিলিয়ে প্রায় পাঁচশো জন আমন্ত্রিত ছিলেন এ দিন। এ দিন গ্রামে রাজেশ ওরাংয়ের সমাধিস্থলকে সাজানো হয় বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে। তার চারপাশে লাগানো ছিল রাজেশের ছবি। গ্রামে রাস্তার দু’পাশেও লাগানো হয়েছে রাজেশের ছবি। বাড়ির পাশেই একটি ফাঁকা জায়গায় প্যান্ডেল বাঁধা হয়। রাত থেকে শুরু হয় রান্না। সমস্তটাই চলছিল নিস্তব্ধ ভাবে।
এ দিন সকালে রাজেশের আত্মার শান্তির জন্য শান্তি পুজোর আয়োজন করা হয়। পুজো শেষে মা মমতা ওরাং নিজের ছেলের ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারপরে বাবা সুভাষ ওরাং ও বোন শকুন্তলা ওরাংকেও দেখা যায় শ্রদ্ধা জানাতে। আগত কারও সঙ্গেই কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না রাজেশের মা ও বাবা। তাঁরা নীরবে বসে ছিলেন ঘরের একটি কোণে। বাড়ির উঠানে দরজার পাশেই লাগানো ছিল রাজেশের ছবি। তাঁরা স্মৃতিচিহ্ন টুপি, বেল্ট ও মেডেল সাজিয়ে রাখা ছিল বাড়ির সামনে একটি টেবিলের ওপর। সকলেই এসে সেই ছবিতে মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
মাঝে মাঝেই কেঁদে ফেলছিলেন রাজেশের পরিজনেরা।
এ দিন সকালে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আসেন। সমাধিস্থলে রাজেশকে প্রণাম করার পর রাজেশের ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারপর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পরিবারকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পরেই আসেন বিহার ১৬ রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট ঋষিকেশ মিশ্র। তিনি
রাজেশের মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যা দরকার সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে। কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, আর্মি ক্যাম্প থেকে এসে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’’
গ্রামে আসেন জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। পুলিশ সুপার প্রথমেই রাজেশের ছবিতে মাল্যদান করেন এবং শ্রদ্ধা জানান। রাজেশের মা ও বাবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায় তাঁকে। অ্যাডিশনাল এসপি সুবিমল পাল ও ডিএসপি ডিএনটি অভিষেক মণ্ডল কেও ওঁদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায়।
জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ, কো-মেন্টর ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিডিও আশিষ মণ্ডল, বিধায়ক নীলাবতী সাহা-সহ জেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মাধ্যক্ষরাও আসেন। অভিজিৎবাবু রাজেশের ছবিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর তাঁর মা ও বাবার হাতে তুলে দেন এক লক্ষ টাকার চেক, ছ’মাসের খাদ্য সামগ্রী ও স্টেশনারির জিনিসপত্র।
তিনি ঘোষণা করেন, খুব তাড়াতাড়ি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মুখ থেকে রাজেশের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হবে। জেলা পরিষদের তরফে দু’টি সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা ও রাজেশের মূর্তি বানানোর কথাও জানান তিনি। এ দিন বীরভূম জেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজেশের পরিবারের সারা জীবনের জন্য যা ওষুধের প্রয়োজন হবে তা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy