গ্রামবাসীকে বোঝাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে মাড়গ্রামের আম্বা গ্রামে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মল্লারপুরের গৌরবাজার গ্রামে প্রশিক্ষক মহিলার বাড়িতে আগুন, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে রাতেই চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার পরে কয়েক ঘণ্টা পেরোতেই বৃহস্পতিবার সকালে মাড়গ্রামের আম্বা গ্রামে ‘ইন্টারনেট সাথী’ প্রকল্পে যুক্ত এক মহিলার বাড়িতে চড়াও হল এনআরসি আতঙ্কে থাকা এলাকারই বাসিন্দারা।
প্রশাসনের নানা চেষ্টার পরেও এনআরসি আতঙ্কে জেলায় গুজব থামার নামই নেই। এ দিন সকালে আম্বা গ্রামের ওই প্রশিক্ষকের বাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকেন গ্রামবাসী। খবর পেয়ে মাড়গ্রাম পুলিশ এলাকায় পৌঁছে গ্রামবাসীকে আইন হাতে না তুলে নেওয়ার আবেদন জানায়। প্রশিক্ষকের বাড়ির সামনে পুলিশ কর্মীরা দাঁড়িয়ে পড়েন। মাড়গ্রাম থানার অফিসার ইন চার্জ সহ রামপুরহাট সিআই, রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও, রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক একে একে হ্যান্ড মাইক হাতে বিক্ষোভরত গ্রামবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য, সংশ্লিষ্ট কালুহা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, এলাকার বাসিন্দা তথা কালুহা অঞ্চলের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহ এলাকার তৃণমূল নেতারাও পুলিশ, প্রশাসনের উপরে ভরসা রাখার জন্য আবেদন জানাতে থাকেন।
শুরুতে শান্ত হয়নি বিক্ষোভকারীরা। ইন্টারনেট সাথী প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে কেন গ্রামের মহিলাদের থেকে মোবাইল নম্বর, বাড়ির অভিভাবকদের নাম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হল সেই প্রশ্ন তোলেন। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে পুলিশ প্রথমে ওই প্রশিক্ষকের শাশুড়ির খোঁজ করে তাঁকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে তোলার সময় উত্তেজিত জনতাকে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে তাড়া করতেও দেখা যায়। এ দিকে, উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের একাংশ আবার প্রশিক্ষকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। তার পরে বিস্তর কসরত করে প্রশিক্ষককে খুঁজে বের করে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের এড়িয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়।
পুলিশ, প্রশাসনের তৎপরতায় আম্বা গ্রামে বিক্ষোভকারীদের ঠেকানো গেলেও গ্রামে চাপা উত্তেজনা থেকেই গিয়েছে। ফিরলে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। গ্রামের বাসিন্দা মুর্ত্তেজা বিবি, সেরিনা বিবিরা জানান, ওই প্রশিক্ষক ও তাঁর শাশুড়ি মিলে গ্রামের মহিলাদের থেকে মোবাইল নম্বর, অভিভাবকদের নাম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তার সঙ্গে এনআরসি-র সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন ওঁদের মতো অনেকেই। প্রশাসন বুঝিয়েছে, বিষয়টি আদপে তা নয়। প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, ভিটে-মাটি খোয়ানোর ভয় মানুষের মনে এমন জাঁকিয়ে বসেছে, সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কারও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে গেলেই মিলিত ক্ষোভের শিকার হতে হচ্ছে। জেলায় কয়েক দিন ধরে চলা ঘটনাক্রমও চোখে আঙুল দিয়ে সেটাই দেখিয়ে দিয়েছে।
রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও রাজীব পোদ্দার বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে সরকারি কোনও সমীক্ষার কাজ চলছে না। গ্রামবাসীদের সে কথা বোঝানো হয়েছে। বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সার্ভের কাজ করছে, এ ব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কেউ জানত না। ওই সমীক্ষায় কী কী তথ্য তোলা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামবাসীও যাতে আইন হাতে না তুলে নেয়, সে ব্যাপারেও বোঝানো হয়েছে।’’
অন্য দিকে, মল্লারপুরের গৌরবাজার গ্রামে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা এই সমস্ত অভিযোগে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছে। জেলা পুলিশের আধিকারিক জানান, ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে গৌরবাজার গ্রাম থেকে বুধবার রাতে ইদেল শেখ, নিউটন শেখ, আকাই শেখ, জিয়ারত শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চার জনের বিরুদ্ধেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy