সরেজমিন: আড়শার উপরগুগুই গ্রামে একশো দিনের কাজ পরিদর্শনে জেলাশাসক। ছবি: সুজিত মাহাতো
নিয়মিত একশো দিনের কাজ পেলে কি আর বাইরে কাজে যেতে হয়! শনিবার আড়শা ব্লকের হেটগুগুই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপরগুগুই গ্রামে একশো দিনের প্রকল্পে হাপা খননের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়তে হল পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকে।
কাজ কেমন পাচ্ছেন, শ্রমিকদের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন জেলাশাসক। তখন এক শ্রমিক তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, গত পৌষ মাসে সাত দিন করে দু’দফায় তিনি কাজ পেয়েছিলেন। আর পাননি। তার পরে দু’দিন আগে জল সংরক্ষণের জন্য এই হাপা তৈরির কাজ তিনি পেয়েছেন। সেই সময়ে ভিড়ের মধ্যে থেকে মহকম গড়াত নামে এক শ্রমিক বলে ওঠেন, ‘‘গ্রামে কাজ পেলে কি আর এত দুর্দশা থাকত আমাদের?’’ জেলাশাসক তাঁর দিকে নজর দিলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ঘর নাই। কাজ পাই না। তাই বাইরেই কাজ করতে যেতে হয়।’’
শুক্রবার জেলার একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে ঠিক এ কথাই বলেছিলেন জেলাশাসক। তিনি জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্পে কাজে গতি বাড়িয়ে আরও বেশি মানুষকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে। তা হলে ভিন্ রাজ্যে আর কাউকে কাজ করতে যেতে হবে না। একই সঙ্গে জেলার স্থায়ী সম্পদও সৃষ্টি হবে। সে জন্য তিনি কাজের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়িয়ে দেন।
শ্রমিকেরা জানান, এলাকায় কাজ না থাকায় তাঁরা দুর্গাপুর, কলকাতা, রাঁচীতে কাজ করতে যান। ‘‘ঘর ছেড়ে ও সব জায়গা কে থাকতে চায় বলুন?’’—জেলাশাসকের দিকেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন বৈশাখী গড়াত, শুকুরমণি গড়াতেরা। ‘‘গ্রামে কাজ পেলে গ্রামেই থাকবেন?’’— জানতে চান জেলাশাসক। একযোগে অনেকেই বলে ওঠেন— ‘‘নিশ্চয়’’। এখানে অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রে মাটি কাটার কাজ হয় বলেও অভিযোগ তোলেন শ্রমিকদের কেউ কেউ। জেলাশাসক তাঁদের আশ্বস্ত করেন।
সেখান থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের ঢালে চাটুহাঁসা পঞ্চায়েতের দুর্গম গ্রাম ধানচাটানিতে যান প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। গ্রামবাসীকে নিয়ে প্রাথমিক স্কুল চত্বরে বসে তাঁরা একশো দিনের কাজ পান কি না তা জানতে চান। সেখানেও একই অভিযোগ—কাজ হয়নি। শেষ কবে কাজ পেয়েছেন? তিলক কর্মকার নামে এক প্রৌঢ় দাবি করেন, ‘‘মনে পড়ে না।’’
জেলাশাসক পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কের কাছে জানতে চান, মানুষজন কাজ করতে চাইলেও কেন তা পাচ্ছেন না? আমতা আমতা করে তিনি দাবি করেন, ‘‘এই গ্রামের জন্য দু’টি হাপা তৈরির কাজ ধরা হয়েছে।’’ কেন শুরু হয়নি? যুবকের জবাব, ‘‘প্রস্তুতি চলছে। শীঘ্রই শুরু হবে।’’ আজ, রবিবারের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে সোমবার থেকে ওই গ্রামে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার কাজ শুরু করে আমার কাছে ছবি পাঠাবেন।’’
গ্রামবাসী জলের সমস্যার সমাধানে জেলাশাসকের কাছে একটি বড় পুকুর খুঁড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। উপযুক্ত জমি আছে কি না জেলাশাসক জানতে চান। তিনি গ্রামবাসীর সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy