Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Awas Yojana

আবাস-অনুদানের আশা, মাটির বাড়িতে ‘সাজানো ঠিকানা’

ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা পঞ্চায়েত এলাকার এক ব্যক্তি জানালেন, দোতলা বাড়িতে বসবাসকারী তাঁর এক প্রতিবেশীর আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩২
Share: Save:

আবাস-সমীক্ষায় দুর্নীতি ঠেকাতে তৎপর প্রশাসন। সমীক্ষায় যাতে গরমিল না হয় তা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নিচুতলার অনেক জায়গাতেই অবশ্য অন্য ছবি। বীরভূমের একাধিক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, পাকা বাড়ির মালিকেরা বরাদ্দ পেতে মাটির বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। তবে প্রশাসনের আশ্বাস, এখন কোনও ভাবে সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হলেও পরে তথ্য যাচাইয়ের সময় যাঁরা যোগ্য নন, তাঁদের নাম বাদ পড়ে যাবে।

ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা পঞ্চায়েত এলাকার এক ব্যক্তি জানালেন, দোতলা বাড়িতে বসবাসকারী তাঁর এক প্রতিবেশীর আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই পড়শি সমীক্ষকদের দেখাতে দু’দিন আমাদের পরিত্যক্ত মাটির বাড়িতে ছিলেন। সমীক্ষকরা তাঁকে সেই বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছেন।’’ মাঠপলশা পঞ্চায়েত এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘আমাদের গ্রামের অনেকের পাকা দোতলা বাড়ি, ট্রাক্টর, জমিজমা থাকা সত্ত্বেও সমীক্ষক দলের কাছে মাটির বাড়িতে বসবাসের ছবি তুলিয়েছেন।’’

বরাদ্দ পেতে নানা ‘অভিনব’ পন্থার কথাও সামনে আসছে। অভিযোগ, আবাস যোজনার অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য তাঁদের গ্রামে এক দোকানদার তাঁর দোকানের পিছনে অস্থায়ী চালাঘর তৈরি করেছেন। নিজের পাকা বাড়ি ছেড়ে এসে তিনি দিনের বেলা সপরিবার সেখানে ‘বাস’ করছেন। আর রাতে পাকা বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন উঠছে, যাঁরা সমীক্ষা করতে যাচ্ছেন তাঁরা কি এই ‘সাজানো’ মাটির বাড়ির বাসিন্দাদের চিনতে পারছেন না? সমীক্ষক দলের এক সদস্য জানাচ্ছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বুঝতে পারলেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং ক্ষোভের মুখে পড়ার আশঙ্কায় বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকতে হচ্ছে। সমীক্ষক দলের এক সদস্য বললেন, ‘‘অন্যের বাড়িতে ছবি তুললেও জমির নথি নিজেদের দিচ্ছেন ওই নকল উপভোক্তারা। সমীক্ষক দলের পক্ষে সব ক্ষেত্রে আমিন ছাড়া এলাকার মানচিত্র দেখে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে মূলত ১০টি আর্থ সামাজিক অবস্থানের উপরে ভিত্তি করে বাংলা আবাস প্লাস যোজনার উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল মাটির বাড়িতে বসবাসকারী পরিবার। ২০২২ সালের সমীক্ষায় ঝাড়াই বাছাইয়ের পর উপভোক্তার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ১১২। পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং তালিকার বাইরে থেকে যাওয়া বাড়িহীন আরও কিছু পরিবার নিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজারের কিছু বেশি। অনুদান বিলির আগে ওই সব উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করছেন ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা। তাঁদের নিজ নিজ বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। সেই ছবির জন্যই গ্রামাঞ্চলে পরিত্যক্ত কিম্বা ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়ির মালিকদের কদর বেড়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে অনুদানের টাকা পেলে ভুরিভোজ বা মিষ্টিমুখ করানোর ‘প্রতিশ্রুতিও’ দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি।

বিরোধীরা তথ্য গোপন করে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের অনুদান পাওয়ার জন্য এ ভাবে ছলচাতুরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছে। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ভোটের জন্যে তৃণমূলের নেতারাই নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের বেআইনি ভাবে অনুদান পাইয়ে দিতে সর্বতো ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
যে সব বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে উপভোক্তাদের ছবি তোলা হয়েছে সেই সব বাড়ির মালিকানা সম্পর্কে ভাল ভাবে খোঁজখবর নেওয়া উচিত প্রশাসনের।’’

তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে আবাস যোজনার সমীক্ষা করছে। দলের সবাইকে ওই ব্যাপারে মাথা ঘামাতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি অস্তিত্ব জানান দিতে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’

প্রশাসনের আধিকারিকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এ ভাবে অন্যের বাড়িতে ছবি তুলে অনুদান পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ জিয়ো-ট্যাগিং প্রযুক্তিতে উপভোক্তার ঠিকানা আর ছবি তোলার মানচিত্রগত অবস্থান এক না হলে তথ্য যাচাইয়ের সময় তা বাদ পড়ে যাবে। সমীক্ষক দল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ছবি-সহ তথ্য পোর্টালে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যা দেখে কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখে নাম বাদ দেওয়া হবে।

তবে বর্তমান বাসস্থান বা যেখানে বাড়ি করতে চান তার সত্যতা
আপাতত বিশদে মিলিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানাচ্ছেন সমীক্ষকদের অনেকে। সমীক্ষক
দলের সদস্য, প্রশাসনের এক কর্মীর কথায়, ‘‘টাকা ছাড়ার আগে সব খতিয়ে দেখা হবে। আপাতত উপভোক্তার কথার ভিত্তিতে মুচলেকা
লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভুল প্রমাণিত হলে টাকা দেওয়া হবে না। অথবা প্রথম দফার টাকা পাওয়ার পরেও ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ ভুয়ো আবেদনের ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলাশাসক বিধান রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত শর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখার পরে উপভোক্তাদের অনুদান বিলি করা হবে। তথ্য গোপন করে অনুদান নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

mayureshwar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy