তদন্তে: ঘর থেকে এই কেরোসিন পায় পুলিশ। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
স্ত্রীকে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও মেজোভাশুরকে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই তরুণী সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পরিজনের অভিযোগ, স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় এই ঘটনা ঘটায় সে ও তার পরিবার। তরুণীর স্বামী জীবন অঙ্কুর অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রথমে জীবন ও পরে তাকে জেরা করে তার বাবা শ্রীকমল ও মেজদা বিনোদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এই ঘটনা ঘিরে শনিবার রাতে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় দুবরাজপুর থানা এলাকার গোহালিয়াড়া গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি জীবন অঙ্কুরের সাথে বিয়ে হয় গ্রামেরই বাসিন্দা ওই তরুণীর। তাঁদের একটি পুত্র ও একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। আক্রান্ত তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, বছরখানেক আগে সাঁইথিয়ায় কাজ করতে গিয়ে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে জীবন। এরপরেই শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করত জীবন। মাসখানেক আগে স্বামীর অত্যাচারে বাপের বাড়ি চলে যান নির্যাতিতা। তারপরে পাড়াপ্রতিবেশীর মধ্যস্থতায় সাময়িক মিটমাট হয়। কিন্তু তারপরেও তাঁদের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। শুক্রবার রাতে ওই স্ত্রীকে জীবন পুড়িয়ে খুন করার চেষ্টা করে বলে দাবি পড়শিদের।
জীবনের পড়শি, তাঁর মেজবৌদি ফুলকলি অঙ্কুরের দাবি, ওই রাতে তিনি সিউড়ি থানা এলাকার কোমা গ্রামে গিয়েছিলেন রাস উৎসব দেখতে। তিনি রাত ন'টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন। তিনি জানান, বাড়ি ঢোকার সময় কেবল শুনতে পেয়েছিলেন যে জীবন তাঁর স্ত্রীকে খাবার চাইছিল। তাঁর কথায়, ‘‘রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বিকট চিৎকার শুনতে পেয়ে ছুটে আসি আমি। দেখি বাড়ির ভিতরে জীবনের স্ত্রী জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে আর বাড়ির বাইরে শিকল তোলা।’’ ফুলকলি ওই শিকল খুলে দিতে, জ্বলন্ত অবস্থাতেই ওই তরুণী জলে ঝাঁপ দেন। ততক্ষণে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রাও ছুটে আসেন। তখনই জীবনও আসে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে জীবন স্ত্রীকে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফুলকলি বলেন, ‘‘পারিবারিক বিবাদের জন্য ওদের সঙ্গে আমরা কথা বলি না। ওদের কোনও ব্যাপারে থাকিও না। এ দিনের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি ওই কাণ্ড। ঘটনার সময় ওদের ছেলেমেয়েও ওই ঘরেই ছিল।’’ জীবনের ছেলের কথায়, ‘‘আমি ঘুমোচ্ছিলাম। চিৎকার শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দেখি মা চিৎকার করছে আর দিদি মায়ের গায়ের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। মা বারবার বেরোনোর চেষ্টা করছিল কিন্তু দরজা বাইরে থেকে আটকানো ছিল, তাই বেরোতে পারছিল না।’’
ফুলকলির বক্তব্যকে সমর্থন করেন স্থানীয়রাও। নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন তাঁর গায়ে অ্যাসিড ঢালার অভিযোগ করলেও হাসপাতাল সূত্রে খবর, কেরোসিন ঢেলে ওই তরুণীর গায়ে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বাবা বলেন, ‘‘জামাইয়ের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে। ওই কারণেই আমার মেয়েকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত জীবনের দাবি, ‘‘আমি বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে পাশের একজনের বাড়ি গিয়েছিলাম। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে এসে দেখি এই কাণ্ড। আমি ঘটনার সাথে কোনওভাবেই যুক্ত নই।’’
রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান তদন্ত করতে যান দুবরাজপুর থানার পুলিশ অফিসারেরা। তাঁরা ওই এলাকা খতিয়ে দেখেন এবং একটি কেরোসিন তেলের বোতল-সহ বেশকিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তাঁরা অভিযুক্তের বৌদির সঙ্গে এবং নির্যাতিতার ছেলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলে পুলিশ। এ দিন সকালে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে ও তার বাবা, মেজদাকেও গ্রেফতার করা হয়। কেন কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy