ফাইল চিত্র।
রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরেই রঘুনাথপুরে ‘শিল্পনগরী’ তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ায় এলেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে নিয়মিত উঠে এসেছে রঘুনাথপুরের শিল্পায়ন ও শিল্পনগরী তৈরির কথা। এ বার বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুক্রবার ভোট-অন অ্যাকাউন্টে রঘুনাথপুরের শিল্পনগরীর নাম ঘোষণা করে অর্থ বরাদ্দ করার প্রস্তাবও দিলেন মমতা।
এ দিন বিধানসভায় তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘রঘুনাথপুরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে থাকা ২,৪৮৩ একর জমির উপরে ‘জঙ্গল সুন্দরী কর্মনগরী’ তৈরি করব আমরা। এই প্রকল্প গড়ে ওঠার ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। আমি, এই বাবদ আগামী অর্থবর্ষে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।’’ তিনি জানান, ডানকুনি থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর হয়ে আসানসোল এবং বড়জোড়া-বাঁকুড়া-রঘুনাথপুর পর্যন্ত যে বিশেষ শিল্প করিডর তৈরি হচ্ছে, তাতে রাজ্যের প্রথম শিল্পনগরী হতে
যাচ্ছে রঘুনাথপুরে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত রঘুনাথপুরের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। রঘুনাথপুরের তৃণমূলের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি দাবি করেন, ‘‘নতুন শিল্পনগরী তৈরি হলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। আগামী দিনে ভোলবদলে যাবে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার।” তবে বিরোধী সিপিএম ও বিজেপির কটাক্ষ, শুধুমাত্র বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই শিল্পনগরী তৈরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আদৌ তা বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তাঁরা।
বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই রঘুনাথপুর মহকুমার তিন ব্লক— রঘুনাথপুর ১, নিতুড়িয়া ও পাড়া এলাকায় শিল্পায়নের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, সে সময়ে প্রায় তিন হাজার একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম। রঘুনাথপুরে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছিল কয়েকটি বেসরকারি শিল্প সংস্থা। তাদের মধ্যে তিনটি সংস্থাকে জমি দিয়েছিল শিল্প উন্নয়ন নিগম। রাজ্যের কাছ থেকে জমি পেয়ে রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
গড়েছে ডিভিসি।
তবে রাজ্যে পালাবদলের পরে রঘুনাথপুর শিল্পায়নের কর্মকাণ্ড থমকে যায় বলে বিরোধীদের দাবি। সূত্রের খবর, তিনটি বেসরকারি সংস্থার মধ্যে দু’টি সংস্থা তাদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্যকে। আর একটি সংস্থা জমি না ফেরালেও প্রস্তাবিত কারখানার একাংশে শুধু সীমানা প্রাচীর তৈরি করা ছাড়া কোনও কাজই গত সাত-আট বছরে করেনি।
এই অবস্থায় রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরি ও সেই কাজে একশো কেটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের কর্মকাণ্ডে নতুন করে গতি আনবে বলেই মত রাজ্য়র শাসকদলের। এলাকার বিধায়ক পূর্ণবাবুর দাবি, ‘‘রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে প্রায় আড়াই হাজার একর জমি আছেই। ফলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। একশো কোটি টাকায় শিল্পনগরী তৈরির জন্য রাস্তা, জল, বিদ্যুতের মতো পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে খরচ করবে রাজ্য সরকার।”
অন্য দিকে, রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে শুধুমাত্র নির্বাচনী ভাঁওতা বলেই কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। বাম আমলে রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের অন্য়তম কাণ্ডারী সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার অভিযোগ, ‘‘নির্বাচনের আগে শিল্পের নামে ভাঁওতা দিছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্প স্থাপনে তাঁর সদিচ্ছা থাকলে সেই কাজ অনেক আগেই করতে পারতেন।”
বামেদের দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রঘুনাথপুরে বড়মাপের সিমেন্ট কারখানা গড়তে আগ্রহী হয়েছিল দু’টি সংস্থা। তার মধ্যে একটি সংস্থা কারখানা গড়েনি। অন্যটি তাদের প্রকল্প রঘুনাথপুর থেকে পানাগড়ে স্থানান্তরিত করেছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এবং রঘুনাথপুরে কারখানা গড়তে ইচ্ছুক শিল্প সংস্থাগুলির জমি ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বাসুদেববাবু বলছেন, ‘‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই কয়েকটি শিল্প সংস্থা জমি ফিরিয়ে দিয়েছে। সবাই জানে তৃণমূলের শিল্প স্থাপনে কোনও
সদিচ্ছাই নেই।”
আর বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘তৃণমূল গত দশ বছরে রঘুনাথপুরে একটি কারখানা গড়তে পারেনি। এখন শিল্পনগরী তৈরির ঘোষণা শুধুমাত্র নির্বাচনী ভাঁওতা ছাড়া কিছুই নয়।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রঘুনাথপুর ১ ও পাড়া ব্লকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির বিষয়ে রাজ্য এগিয়েছে। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রের দাবি, ‘‘রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরির বিষয়ে অনেক আগে থেকেই রাজ্য সরকার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই রঘুনাথপুরের কারখানা তৈরিতে আগ্রহও দেখিয়েছে। বিরোধীরা হতাশা থেকে এ সব বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy