Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Madhyamik Exam 2024

গ্রামের প্রথম মাধ্যমিক পাশ গৌরী

শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের খেলেডাঙা নামোপাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। প্রায় ৩২টি পরিবারের বাস সেখানে। উন্নয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ গ্রামে।

গৌরী হেমব্রম। শান্তিনিকেতনে গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার।

গৌরী হেমব্রম। শান্তিনিকেতনে গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ১০:০১
Share: Save:

এখনও গ্রামে শিক্ষার আলো সে-ভাবে পৌঁছয়নি। গ্রামে মাধ্যমিকের গণ্ডি এর আগে কোনও ছেলে বা মেয়ে পেরোয়নি। সেই গ্রামেরই আদিবাসী পরিবারের গৌরী হেমব্রম এ বারের মাধ্যমিকে সফল হয়ে নজির সৃষ্টি করেছে। তার সাফল্যে খুশি পরিবার ও গ্রামবাসী থেকে স্কুলের শিক্ষিকারা।

শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের খেলেডাঙা নামোপাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। প্রায় ৩২টি পরিবারের বাস সেখানে। উন্নয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ গ্রামে। আবাস যোজনার বাড়ি থেকে শুরু করে পাকা রাস্তা, কোনও কিছুই হয়নি এখনও। একই অবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রে। গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০০-১২০ জনের বাস। বেশির ভাগেরই পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তাঁদেরই মধ্যে থেকেই কিছুটা ব্যতিক্রমী গৌরী। দিনমজুরির কাজ করে করে কোনও রকমে সংসার চালান গৌরীর বাবা বাবুরাম হেমব্রম। পরিবারে রয়েছেন গৌরীর মা মিতালি ও দাদা মহাদেব হেমব্রম। অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী।

তাতেও থেমে যায়নি গৌরীর লড়াই। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসে সফল হয়ে গ্রামের লোকেদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিনুড়িয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী‌ গৌরী। কখনও মাটি কাটার কাজ, কখনও ধান পোঁতার কাজে মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। শুক্রবার গৌরী জানায়, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাকে সব চেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তাঁর স্কুলের শিক্ষিকা এবং এক গৃহ শিক্ষিকা। তাঁদের তত্ত্ববোধনেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে গৌরী। তার কথায়, “এর আগে গ্রামের কোনও মেয়েই এতদূর পর্যন্ত পড়েনি। আমার পড়াশোনার পিছনে স্কুল, গৃহশিক্ষিকার অবদান সবচেয়ে বেশি। তাঁরা না-থাকলে আমি এতদূর পৌঁছতে পারতাম না। আজ সত্যিই খুব ভালো লাগছে। বড় হয়ে আমি এই গ্রামের মানুষের সেবা করতে চাই।’’

গৌরীর মা মিতালি বলেন, “আমরা কোনও দিন ভাবতে পারিনি, আমাদের বাড়ির কেউ মাধ্যমিক পাশ করবে। আজ মেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে এলাকার সকলের মন জয় করেছে। খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি চাই ভবিষ্যতে সে এই গ্রামেই মানুষের জন্য কিছু করুক।” গৌরীর বাবা বাবুরাম বলেন, “বেশ কিছু বছর আগে ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু পাশ করেতে পারেনি। সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দিল মেয়ে।” বিনুড়িয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অদিতি মজুমদারের কথায়, “অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে মেয়েটি বড় হয়েছে এবং পড়াশোনা করে সফল হয়েছে। তার এই চেষ্টাকে কুর্নিশ জানাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE