পাড়ুইয়ের পাহাড়পুর গ্রামে পুলিশের টহল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
ভোটের মুখে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল পাড়ুই। হামলা, পাল্টা মারধরে জখম হলেন কয়েক জন। অভিযোগ, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়।
বিজেপির নালিশ, তাদের সাইকেল মিছিলে হামলা চালায় শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে পাড়ুই থানার অমরপুর পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর গ্রামে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অমরপুর অঞ্চল থেকে বিজেপির একটি সাইকেল মিছিল হওয়ার কথা ছিল। বিজেপির দাবি, সে জন্য প্রশাসনিক অনুমতিও মিলেছিল। বিজেপির অভিযোগ, অমরপুর গ্রাম ঘুরে সাইকেল মিছিলটি পাহাড়পুরে তৃণমূল কার্যালয়ের কাছে পৌঁছতেই ওই অফিস থেকে মিছিলে হামলা করা হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়।
তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের ওই অফিসে ভাঙচুর করা হয়। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের নালিশ, এ দিন সকালে অমরপুরের দলীয় কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে অঞ্চল কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে ৫০-৬০ জন ছিলেন। ওই সময়েই বিজেপির একটি সাইকেল মিছিল সেই অফিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মিছিল থেকে কয়েক জন হঠাৎ লাঠি, বাঁশ, তীর-ধনুক নিয়ে তৃণমূলের কার্যালয়ে হামলা করে। দলের ফেস্টুন, নেতাদের ছবি, টেলিভিশন, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করা হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই হামলায় তাদের দুই সমর্থক গুরুতর আহত হয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী অমরপুরে পৌঁছয়। সেখানে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) তন্ময় সরকার। পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকায় ফের যাতে উত্তপ্ত না হয়, সে জন্য পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রশান্ত সাধু বলেন, ‘‘পাড়ুই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ বিজেপি নেতা শেখ সামাদ বলেন, ‘‘অমরপুরে আমাদের মিছিল বানচাল করতে তৃণমূল ছক কষে হামলা চালায়। ওরা নিজেদের কার্যালয় নিজেরাই ভেঙে বিজেপির উপরে দোষ চাপাচ্ছে। মিছিলের আগে তৃণমূলের কয়েক জন আমার বাড়িতেও হামলা করেছিল। আমাকেও মারধর করা হয়।’’
এ দিন দুপুরে অমরপুর গ্রামে রাস্তার দু’পাশে তীর-ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা। বিজেপি সমর্থক বংশী দেবাংশী বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করছিলাম। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়। আমাদের দলের চার জন আহত হন।’’
তদন্ত শুরু করেছে পাড়ুই থানার পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের লোকসভা ভোটের পরে পরেই পাড়ুইয়ে গ্রাম জুড়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব শুরু হয়েছিস। লড়াইয়ের নেপথ্যে এলাকা দখল-পুনর্দখলের রাজনীতি।
মারের জবাবে পাল্টা মারের রাজনীতিতে পাঁচ বছর আগের সেই সময়ে উত্তাল হয়েছিল পাড়ুই। তখন সিপিএমের সংগঠন তলানিতে। শাসকদলকে টক্কর দিতে তাই এক সময়ের বাম কর্মী-সমর্থকেরা আশ্রয় হিসাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন পদ্মফুলকেই। বীরভূম বিজেপি-র সভাপতি তথা এ বারের লোকসভা ভোটের প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের হাত ধরে এ রাজ্যে বিজেপির মুখ হিসেবে উঠে এসেছিল পাড়ুই।
বিজেপি যত বাড়তে থাকল, ততই অশান্ত হল এলাকা। ২০১৪ সালে ২৪ অক্টোবর মাখড়ায় এই সংঘর্ষ চরম আকার নেয়। গ্রাম দখল নেওয়ার জন্য আসা মাস্কেট বাহিনীর সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের লড়াইয়ে এক দিনে তিনটি প্রাণ চলে যায়।
মাঝে কয়েক বছর কিছুটা শান্ত থাকলেও, ভোটের মুখে ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল পাড়ুইয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy