নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
ব্যবধান ঠিক এক বছরের।
গত বছর তিনি জেলায় এসেছিলেন বিশ্বভারতীর আচার্য হিসাবে। এ বার এলেন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। দলের হয়ে ভোট চাইতে। ২০১৮-র মে মাসে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করতে এসে জনতার সঙ্গে সংযোগ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা তিনি পুষিয়ে নিয়েছেন বুধবার, ইলামবাজারের কামারপাড়ার নির্বাচনী জনসভায়। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জনতাকে প্রশ্ন করেছেন, তাদের হাততালির অপেক্ষা করেছেন। হাততালি শেষে আবার বক্তৃতা দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে মোদীর মিনিট পঁচিশেকের বক্তৃতায় দলের নেতা-কর্মীরা খুশি। এ দিন মোদীর আসার কথা ছিল ২টো নাগাদ। কিন্তু, গেরুয়া উত্তরীয়, দলের প্রতীক দেওয়া টুপি ও ব্যাজ, দলীয় পতাকা, বাজনা নিয়ে মোদীর সভায় কর্মী-সমর্থকদের দলেদলে আসা শুরু হয়েছিল সেই সকাল ১০টা থেকে। ইলামবাজার, সিউড়ি, নানুর, বোলপুর হয়ে যে ক’টি রাস্তা দিয়ে ইলামবাজারের এই সভাস্থলে পৌঁছনো যায়, সেই সব রাস্তা ধরেই কর্মী-সমর্থকেরা আসছিলেন বাস, মিনি বাস, ছোট গাড়ি, ম্যাটাডর, মোটরবাইক ও স্কুটারে। রাস্তার দু’পাশে দলীয় পতাকা ও মোদীর সমর্থনে পোস্টারে ছয়লাপ ছিল। সাড়ে ১১টার মধ্যে মাঠের অর্ধেক ভরে ওঠে। মঞ্চে তখন জেলা ও রাজ্য নেতাদের কয়েক জন এবং রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
যত সময় গড়িয়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। এই গরমের মধ্যেও মাঠে উপচে ভরা ভিড় হয়েছে। জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, সভায় আসা ভিড়ের জন্য আড়াই লক্ষ জলের পাউচ ও আটটি জলের ট্যাঙ্কার রাখা হয়েছিল। জলের পাউচ দলের কর্মীরা বিলি করেছেন জনতার মধ্যে। বিজেপির দাবি, এ দিন লোক এসেছিলেন প্রায় এক লক্ষ। যদিও পুলিশের হিসেবে ভিড় ৪০-৫০ হাজারের। দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের দাবি, ‘‘শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হবে এ দিনের স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত।’’ ঘটনাচক্রে মোদীর সভা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ দিন সন্ধ্যায় সিউড়ি থানার হাটজন বাজারে বিজেপি কর্মীদের মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি-র দাবি, এর থেকেই স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রীর সভার ভিড় তৃণমূলকে আতঙ্কে রেখেছে। সেই আতঙ্ক থেকেই তৃণমূল এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
দুপুর দুটো নাগাদ সভায় আসার কথা থাকলেও এক ঘন্টা দেরিতে মোদীর হেলিকপ্টার কামারপাড়ার সভাস্থল ছোঁয়। ‘‘আপনারা কেমন আছেন’’— বাংলায় এ কথা বলা দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। শুরু থেকেই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন মোদী। বোলপুর ঘেঁষা এলাকায় এসে নিজের বক্তৃতায় শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘আগের বার শান্তিনিকেতনে এসেছিলাম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে। এ বার এসেছি নতুন ভারত গড়ার আর্শীবাদ নিতে। কিন্তু ভিড় দেখেই বুঝেছি, এ বার দিদির সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় এসেছে।’’ তাঁর দাবি, বোলপুরে পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু, যতদিন তৃণমূলের ‘গুন্ডাগিরি’ থাকবে, ততদিন পর্যটন বাড়বে না বা নতুন উদ্যোগ আসবে না। মোদীর অভিযোগ, ‘‘রবীন্দ্রনাথ এমন বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কাউকে মাথা নত করে থাকতে হবে না। কিন্তু, বাংলায় তৃণমূলের গুন্ডাদের সামনে মাথা নত করেই থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’’ গুরুদেবের শান্তিনিকেতনও এখন গুন্ডারা অশান্ত করে তুলেছে বলে দাবি করেন মোদী।
অমিত শাহের সুরেই মুখ্যমন্ত্রীকে মোদীর কটাক্ষ, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের এত বছরের শাসনের পর আপনারা দিদির উপর ভরসা করেছিলেন। দিদি কী করেছেন? দাদাগিরিকে টপ গিয়ারে তুলেছেন। আর বিকাশে স্পিডব্রেকার লাগিয়ে দিয়েছেন। আপনারাই বলুন, এ রাজ্যে তৃণমূল দাদাদের ভাগ না দিয়ে কোনও কাজ হয় কি?’’
এ কথা শুনে হাততালি পড়ে সভায়। পাকিস্তানের বালাকোটে বায়ুসেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়েও তৃণমূলকে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘দিদি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রামাণ চান। যে কংগ্রেসের সঙ্গে দিদি পাঁচ বছর ছিলেন, তাঁরা তো আতঙ্কবাদের সামনে শুধু কেঁদেছেন।’’ এ কথা শুনে ফের উল্লসিত হয় ভিড়। এর পরেই জনাকে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনারা খুশি তো ? আতঙ্কবাদ খতম হওয়া উচিত তো?’’
সমস্বরে উত্তর আসে ‘হ্যাঁ’। মোদী বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদকে শেষ করতে আপনাদের ভোট জরুরি। তা হলেই এই চৌকিদার মজবুত হবে, আপনাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy