পুরুলিয়ায় দিলীপ, লকেট, জ্যোতির্ময়-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলাতেও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কাউকে সিবিআই, ইডি ছাড়বে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। নবান্ন চলো কর্মসূচির সমর্থনে শনিবার পুরুলিয়া শহরে বিজেপির মিছিল ও পথসভা ছিল। সেখানেই বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাশে থেকে দলের দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো জেলার প্রথম সারির কিছু তৃণমূল নেতার নাম উল্লেখ করে তাঁদেরও ছাড়া হবে না বলে তোপ দাগেন।
গত ১১ জুন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এসেও জেলার কয়েক জন শীর্ষ তৃণমূল নেতা, বিধায়কের বিরুদ্ধে কয়লা পাচার কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এ দিনও সব ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এ দিনের সভায় লকেট দাবি করেন, ‘‘পুরুলিয়াতে এখনও হাত দেয়নি। শুনেছি, পুরুলিয়াতে অনেক নেতারা রয়েছে। কয়লা চুরিতে, বালি চুরিতে, লোহা চুরিতে এখনকার লোকজন আছেন। নাম তো আছে। (একটি কাগজ নিয়ে বলতে শুরু করেন) শান্তিরাম মাহাতো (প্রাক্তন মন্ত্রী) সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় (সভাধিপতি), পূর্ণচন্দ্র বাউরি (প্রাক্তন বিধায়ক), রাজীবলোচন সরেন (বর্তমান বিধায়ক), সন্ধ্যারানি টুডু (মন্ত্রী)। কেউ ছাড় পাবেন না। সিবিআই-ইডি তারা নিজেরা ঠিক তদন্ত করে একেবারে আসল সত্য বের করবে। কোথায় লুকিয়ে আছে মানুষের লুটের টাকা। তৈরি থাকুন। সিবিআই-এর উপরে আমাদের ভরসা রয়েছে। তারা আসবে। যারা চুরি-ডাকাতি করেছে একটা কাউকে ছাড়বে না।’’
প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গে তুলে পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় দাবি করেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে! এই টাকা চাকরির জন্য দেওয়া হয়েছিল। পুরুলিয়াতেও এ রকম রয়েছে। পুরুলিয়াতে বসে যাঁরা ভাবছেন, আমাদের কিছু হবে না, মনে রাখবেন আদালত আছে।’’
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপি নিজের ভ্রান্ত নীতির কারণে ক্রমশ মানুষের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। তাই হাততালি কুড়োতে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন বিজেপি নেতারা। সবাই জানেন, বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করছে।’’ মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। আগামী পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’
চলতি বছরের ১১ জুন বলরামপুরের সরাই ময়দানে এসে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, ‘‘রঘুনাথপুরের কয়লা মাফিয়ার ডায়েরিতে শান্তিরাম মাহাতো, সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশান্ত মাহাতোর নাম আছে।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘এটা আমার কথা নয়, এজেন্সির কথাও নয়। পুলিশের এক জন আইসি ধরা পড়েছিলেন বাঁকুড়ায়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে ইডি দিল্লি কোর্টে যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতেই আরও কয়েকজনের সঙ্গে এই নামগুলিও রয়েছে।’’
সে বার সুজয় ও শান্তিরাম দু’জনেই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, শুভেন্দু ডায়েরির কথা জানলেন কী করে? তাহলে কি বুঝে নিতে হবে ডায়েরিতে কার কার নাম থাকবে তা তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন? সুশান্ত অবশ্য তারপর থেকেই ফোন ধরছেন না। এত দিনেও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ঘটনাচক্রে তার কয়েক মাস পরে কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে পুরুলিয়ার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক ও বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকে দিল্লিতে তলব করে ইডি।
সভায় দিলীপ দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের অনেক নেতাই এ বারে দুর্গাপুজো দেখতে পাবেন না। দুর্নীতির টাকায় কেনা গাড়িতে বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুরতে পারবেন না। নতুন জামাকাপড় পরতে পারবেন না। জেলে থাকতে হবে।’’ জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডল সম্পর্কে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘চুলের রং, গোঁফের রং পাল্টে গিয়েছে। জেলের মেঝেতে শুতে হচ্ছে। ঘুম হবে কী করে?’’ সিআইডি সব সময় এখানকার দুর্নীতি আর অবৈধ কাজকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে তোপ দাগেন তিনি।
সভায় ছিলেন দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, দলের ছয় বিধায়ক-সহ জেলা সভাপতিবিবেক রঙ্গা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy