রামী-চণ্ডীদাসের স্মৃতি বিজড়িত দেওতা পুকুরে রামীর কাপড় কাচার ঘাট। নানুরে। নিজস্ব চিত্র
আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বৈষ্ণব পদকর্তা চণ্ডীদাস এবং তার প্রণয়িনী রজকিনী রামীর নানা স্মৃতিচিহ্ন। সে সব দেখতে সারা বছরই পর্যটকেরা নানুরে আসেন। গবেষণার উপাদান খুঁজতে আসেন গবেষকরাও। অথচ পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে নানুর আজও অবহেলিত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। রামী-চণ্ডীদাসের স্মৃতিবিজড়িত ক্ষেত্রটিকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
নানুরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ার দাবি দীর্ঘদিনের। ইতিহাস বলে, এক সময়ে নানুর ছিল বৈষ্ণব পদকর্তা চণ্ডীদাসের সাধনক্ষেত্র। তার পরিচিতি নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তাই তাকে রামী-চণ্ডীদাস হিসেবেই উল্লেখ করে থাকেন অনেকে। চণ্ডীদাস ছিলেন গ্রামদেবী বিশালাক্ষীর পূজারী। পেশায় রজকিনী, রামীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন তিনি। তাই নিয়ে তৎকালীন সমাজে বিরূপ সমালোচনার ‘ঝড়’ ওঠে। পূজারীর চাকরি যাওয়ারও উপক্রম হয়। তবুও সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে, প্রণয়ে অটল থাকেন চণ্ডীদাস। বৈষ্ণব সাহিত্যেও তার প্রমাণ মেলে। রামীকে নিয়ে একের পর এক পদ রচনা করে গিয়েছেন চণ্ডীদাস। এই রচনাই নানুরকে স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে। নানুরকে দেখার কৌতূহলও যুগিয়েছে। কিন্তু সেই আর্কষণ ধরে রাখার জন্য প্রশাসন তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নানুরকে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটতে পারে বলেই এলাকাবাসীর দাবি। তাঁরা জানান, নানুরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। রামী-চণ্ডীদাসের স্মৃতি বিজড়িত দেওতা পুকুরে রামীর কাপড় কাচার ঘাটটি আজও রয়েছে। সংলগ্ন রক্ষাকালী মন্দিরে কাপড় কাচার পাটাটিও রয়েছে। রয়েছে চণ্ডীদাস আরাধ্য বিশালাক্ষী মন্দির। চণ্ডীদাসের সমাধি হিসেবে পরিচিত মন্দির লাগোয়া উঁচু ঢিপি রয়েছে। আর রয়েছে রামী ও চণ্ডীদাসকে ঘিরে নানা কাহিনি। রামীর কাপড় কাচার সেই ঘাটটি বছর কয়েক আগে বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে বাঁধিয়ে নামকরণ করা হয়েছে রজকিনীর ঘাট। তৈরি হয়েছে একটি অতিথি আবাসও। কিন্তু তার পরেই থমকে গিয়েছে যাবতীয় উদ্যোগ।
অথচ বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদের মাঝে অবস্থিত নানুরকে কেন্দ্র করে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি, নানুরের কাছে কীর্ণাহারের উপর দিয়েই গিয়েছে আমোদপুর-কাটোয়া ব্রডগেজ রেলপথ। এখান থেকে সহজে লাভপুরের ফুল্লরা মন্দির, বোলপুরের কঙ্কালিতলা, শান্তিনিকেতন অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়। ওই সব এলাকা থেকেও পর্যটকেরা নানুরে আসতে পারেন। কিন্তু তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রশাসনের তেমন কোনও ভূমিকা নেয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাই পর্যটকেরা মুখ ঘুরিয়েই রয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ।
চণ্ডীদাস গবেষক অসীম ভট্টাচার্য, সাহিত্যকর্মী রঘুরাজ সিংহেরা জানান, বাইরে রামী-চণ্ডীদাস পরিচিত নাম। সেই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে নানুরকে অনায়াসেই একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়। সে ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরাকারি উদাসীনতায় সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এলাকার বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি জানিয়েছেন, পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে নানুরের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। কিন্তু তেমন কোনও কাজ হয়নি। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পর্যটনমন্ত্রীর জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি ইতিবাচক সাড়া মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy