(বাঁ দিকে) কবিগুরু মার্কেটে তৈরি করা হচ্ছে ধর্না মঞ্চ। (ডান দিকে) বিতর্কিত ফলক। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার সকালের মধ্যে বিশ্বভারতীর ফলকে ফিরিয়ে আনতে হবে রবি ঠাকুরের নাম। তা না হলে আন্দোলনের পথে হাঁটবে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে তেমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই মতোই শুক্রবার সকালে বিশ্বভারতী চত্বরে ধর্নামঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে দিল তৃণমূল। শুক্রবার থেকেই শাসকদলের নেতৃত্ব বিশ্বভারতীর ফলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে আনার দাবিতে কবিগুরু মার্কেটে ধর্না শুরু করবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী-সহ বোলপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি রয়েছেন বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রীরাও। এই প্রসঙ্গে চন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন তার মধ্যে বিশ্বভারতী তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যেমন ঘোষণা করেছিলেন সেভাবেই ধর্না মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আন্দোলন করা হচ্ছে। এরপরও কোন ব্যবস্থা না গ্রহণ করা হলে আগামী দিনে তৃণমূলের তরফ থেকে আরও বড় কর্মসূচি পালন করা হবে।’’
উল্লেখ্য যে, বিশ্বভারতীকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে একের পর এক বিতর্ক। বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে বসানো ফলককে কেন্দ্র করেও। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র ঘোষণার পর গত ১৯ অক্টোবর এই স্বীকৃতির একটি ফলক বসানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বিশ্বভারতীর তরফে উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে শ্বেতপাথরের যে ফলক বসানো হয়েছে, তাতে লেখা, ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। তার ঠিক নীচে প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদী এবং বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। কিন্তু নাম নেই বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথের। আর সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। বিশ্বভারতীর আশ্রমিক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী এবং শিক্ষকদের একাংশ এই ফলক দেখে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। অনেকের দাবি, এমন ঘটনা বিশ্বভারতীতে বেনজির। কারণ, সেখানকার প্রথা অনুযায়ী কোনও উদ্বোধনী ফলক বা স্বীকৃতি ফলকে সাধারণত কারও নাম উল্লেখ করা হয় না।
বৃহস্পতিবার ফলক-বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি জানিয়ে দেন, শুক্রবার সকালের মধ্যে বিশ্বভারতীর ফলকে রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে না আনলে আন্দোলনের পথে হাঁটবে তৃণমূল। মমতা বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য। তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। ওঁর নাম সরিয়ে দিয়েছে! পুজো বলে আমরা এটা চুপচাপ হজম করেছি। কাল সকালের মধ্যে ওই ফলক না সরালে এবং রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে না আনলে ওখানে আমাদের লোক রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে।’’
মমতার হুঁশিয়ারির আগেই অবশ্য বিশ্বভারতীর ফলক-বিতর্কে কোমর বেঁধে নেমেছিল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে তৃণমূলের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে এ নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। সেই পোস্টে বাংলার শাসকদল প্রশ্ন তোলে, ‘‘মোদীজি কি নিজেকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে মনে করছেন?’’ বিশ্বভারতীর ফলক থেকে রবি ঠাকুরের নাম বাদ দেওয়া, মোদী এবং বিদ্যুতের নামকে প্রাধান্য দেওয়া শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, প্রত্যেক ভারতীয়ের অপমান বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূল। তাদের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘‘এই প্রবণতা আসলে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’
তবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি-ফলক বিতর্কে পিছু হঠেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। চাপের মুখে কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ফলক অস্থায়ী ভাবে বসানো হয়েছে। ভবিষ্যতে তা সরিয়ে দেওয়া হবে। যদিও কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামহীন ফলক সরানো হবে, কবে তাঁর নামাঙ্কিত ফলক ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ভাবেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো বিশ্বভারতীর ফলকে কবিগুরুর নাম ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনের পথে হাঁটতে তৎপর তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy