Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূলের ‘গোঁজে’ই ভরসা খুঁজছে বাম শিবির

দলের বিধায়ক দীপালি সাহার সঙ্গে বনিবনা নেই পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের। তা অজানা নেই বিরোধীদেরও। তৃণমূলের যুযুধান দুই নেতৃত্বের কোন্দলের ফায়েদা নিতে সোনামুখীর চারটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। পরিকল্পনা করেই যে এমন কৌশল— তা গোপন করছেন না সিপিএম নেতৃত্ব।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৪
Share: Save:

দলের বিধায়ক দীপালি সাহার সঙ্গে বনিবনা নেই পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের। তা অজানা নেই বিরোধীদেরও। তৃণমূলের যুযুধান দুই নেতৃত্বের কোন্দলের ফায়েদা নিতে সোনামুখীর চারটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম।

পরিকল্পনা করেই যে এমন কৌশল— তা গোপন করছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। দলের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায় খোলাখুলিই মানছেন, “এটা আমাদের রণকৌশল। বাম বিরোধী মানুষের ভোট টানতেই ৪, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিহ্ন ব্যবহার করিনি আমরা।” ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শাসক দলের গোঁজ প্রার্থীদের দাপটও আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে বাম শিবিরকে।

বর্তমানে জেলায় একমাত্র সোনামুখী পুরসভা সিপিএমের দখলে রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সোনামুখী ব্লকে কিছুটা জমি ধরে রাখতে পেরেছিল বামেরা। লোকসভা ভোটেও সোনামুখী পুর এলাকার মানুষ সাতটি ওয়ার্ডে সিপিএমকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। গত পুর নির্বাচনে ১৫টির মধ্যে ৮টি বাম ও ৭টি ওয়ার্ড পেয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী জেলায় এসে থেকেই সোনামুখী পুরসভা ছিনিয়ে নিয়ে আসার কথা বলে যাচ্ছেন। আলাদা গুরুত্বও দিচ্ছেন এই পুরসভাকে। কিন্তু গোষ্ঠী কোন্দল বড় বালাই— নেতাদের বনিবনার অভাবে প্রথম থেকেই হোঁচট খাচ্ছে শাসক দল। কেমন?

পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুরজিতের সঙ্গে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি টক্কর চলছে বিদায়ী পুরপ্রধান কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। লড়াই সেয়ানে সেয়ানে হলেও সিপিএম শিবির আত্মবিশ্বাসী। কারণ অবশ্যই গোঁজ প্রার্থী অজয় অধিকারী। অজয়বাবু দীপালি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই নির্দল প্রার্থী তাঁর প্রচারে সুরজিতকে টিপ্পনি কাটতেও ছাড়ছেন না। ফলে সুরজিতের প্রতিপক্ষ শুধু কুশলবাবু নন— অজয়বাবুও। সিপিএম শিবিরের হিসেব, দলের নিজস্ব ভোট ধরে রাখতে পারলেই শাসক দলের ভোট ভাগাভাগিতে জিতে যাবেন কুশলবাবু। এমন হিসেব কী টের পাচ্ছেন না তৃণমূল শিবির? সুরজিৎবাবুর প্রতিক্রিয়া, “সদ্য বাবা মারা গিয়েছেন। এত দিন পারলৌকিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। প্রচারে নামলেই মানুষের মন বুঝতে পারব”। তবে যতই গোঁজ প্রার্থী থাক, প্রকৃত তৃণমূলের ভোট ভাগ হবে না বলেই তিনি আশাবাদী।

দীপালির পথেও কাঁটা বিছানো। কেমন? ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন বিধায়ক। সেখানে আবার গোঁজ প্রার্থী হয়েছেন বাণীব্রত হালদার। বাণীব্রতবাবু সুরজিতের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। দুই তৃণমূল প্রার্থীর লড়াইয়ে ভোট ভাগাভাগি হবে বলে বিশ্বাস সিপিএম শিবিরের। জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব কর্মকার। একই পরিস্থিতি ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও। এখানে সুরজিৎ ঘনিষ্ঠ প্রদীপ লাহা তৃণমূল প্রার্থী। গোঁজ প্রার্থী বাসুদেব দাস দীপালি ঘনিষ্ঠ। সিপিএমের প্রার্থী সনৎ ঘোষ তাই একই রকম আশাবাদী ভোটের ফল নিয়ে। দীপালিদেবী অবশ্য উন্নয়নের প্রশ্নে সিপিএমকে কোনঠাসা করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। মানুষের কাছে শালীনদীর সেতু, বাইপাসের মতো নানা বিষয় আনছেন প্রচারে।

গোঁজ প্রার্থীর জেরে বেসামাল ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূলের দু’জন গোঁজ প্রার্থী রয়েছেন। বাসুদেব দাস ২০০৫-১০ পর্যন্ত এই ওয়ার্ডেরই তৃণমূলের কাউন্সিলার ছিলেন। গত পুরভোটে পুর-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকের লড়াই করে এই ওয়ার্ডেই তিনি পরাজিত হন তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী তথা আসন্ন পুরভোটে এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বাসুদেব মাঝির কাছে। আরেক নির্দল রাজর্ষি রাজ গত পুর নির্বাচনে বাসুদেব মাঝির প্রচারে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এ বার তিনিও নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। কাজেই তৃণমূল প্রার্থী বাসুদেব মাঝির সঙ্গে রাজর্ষি ও বাসুদেব দাসের ভোট কাটাকাটির সম্ভবনা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই স্বস্তিতে সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ বাউরি।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ঝিলিক দত্ত এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী জীবন দত্তের ভাইঝি। জীবনবাবু নিজে ঝিলিকের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। এই ওয়ার্ডে আবার শাসকদলের প্রতীকে কোনও প্রার্থী নেই। তাই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী ঝুমা সু-কেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে বামেরা। তৃণমূল অবশ্য সমর্থন করছে চৈতালি বিশ্বাসকে। যদিও তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশ বিজেপিকেই সমর্থন করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। বামেদের নির্দল প্রার্থী রয়েছে যে চারটি ওয়ার্ডে তার মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাম বিরোধী ভোট বেশি। তাই এই ওয়ার্ডে এর আগেও নির্দল প্রার্থী দিয়ে বাজিমাত করেছে বামেরা।

টক্কর একেবারে কাঁটায় কাঁটায়। তা মেনেই শাসক দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলছেন, “সোনামুখী এ বার আমাদের দখলে আসবেই। দিনের শেষে মানুষ আমাদেরই ভোট দেবেন।’’ জেলা সভাপতি জোর গলায় যে দাবিই করুন, সোনামুখীরই এক তৃণমূল নেতার স্বীকারোক্তি, “এই বাজারেও সিপিএম জোর গলায় বলতে পারছে, তারা অন্তত পাঁচটা আসন পাবে। গোঁজদের সৌজন্যে আমরা সে টুকুও বলতে পারছি কই?”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy