ঘেরাটোপ: বিক্ষোভের মুখে তৃণমূলকর্মী। লাভপুরের ঠিবায়। নিজস্ব চিত্র
জবকার্ডধারীরা দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া। অভিযোগ, তাঁদের জবকার্ডে বরাদ্দ টাকা লোপাট করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পাঁচ কর্মীকে ঘেরাও করে টাকা ফেরতের দাবি জানালেন ২৭ জন জবকার্ডধারী সহ গ্রামবাসীদের একাংশ। আবাস যোজনায় কাটমানি নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে লাভপুরের ঠিবা পঞ্চায়েতের কাঁদরকুলো গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেখানকার গ্রাম কমিটির সদস্য চণ্ডীচরণ ঘোষ, বেণীমাধব মণ্ডল, রামকৃষ্ণ ঘোষ, লক্ষ্মীনারায়ণ মণ্ডল, অহিরত বাগদিকে ঘিরে টাকা ফেরতের দাবিতে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ দেখান।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চণ্ডীচরণবাবু পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী। অন্যেরা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সুপারভাইজার। এলাকাবাসীর একাংশের নালিশ, দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া কয়েক জনের জবকার্ড ব্যবহার করে মজুরির টাকা লোপাট করেন তাঁরা। জবকার্ডধারীরা তা জানতেও পারতেন না। অভিযোগ, প্রায় ২৭ জন জবকার্ডধারীর জন্যে বরাদ্দ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিষয়টি সামনে আসায় শোরগোল পড়ে। টাকা ফেরতের দাবিতে অভিযুক্তদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান জবকার্ডধারীরা। সুনীল থান্দার, দিলীপ থান্দার, ফড়িং থান্দার বলেন, ‘‘অনেক দিন আগে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের জবকার্ড আটকে রেখে বছরের পর বছর ধরে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বিডিওকেও জানিয়েছি।’’
চন্ডীচরণবাবুরা অবশ্য দাবি করেছেন, বুথ সভাপতির নির্দেশেই দল পরিচালনা এবং দলীয় কর্মীদের রাজনৈতিক মামলার খরচ চালানোর জন্য তাঁর ও বুথ সভাপতির তিনটি করে অ্যাকাউন্ট এবং আরও কয়েক জনের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো হয়েছে। চণ্ডীবাবু বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি ভুল করেছি। এখন বুথ সভাপতি যা করবেন তাই হবে। আমি একা টাকা নিইনি। তাই সব টাকা আমার পক্ষে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। হিসেব করে আস্তে আস্তে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
বুথ সভাপতি অনিল মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি এমন কোনও নির্দেশ দেননি। তাঁর কোনও অ্যাকাউন্টেও টাকাও ঢোকে নি।
লাভপুর ব্লকের বিডিও শুভ্র দাস বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ এখনও পাইনি। পেলে তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার এক উপভোক্তার নাম ভাঁড়িয়ে টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তথা ঠিবা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রূপা বাগদির স্বামী শ্রীমন্ত বাগদির বিরুদ্ধে। দিন সাতেক আগে ওই টাকা ফেরতের দাবিতে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। সাত দিনের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার মুচলেকা লিখে দিয়েছিলেন শ্রীমন্তবাবু। না হলে সেই টাকার সম-পরিমাণ জমি লিখে দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন। বৃহস্পতিবার মুচলেকার শর্ত অনুযায়ী আসল প্রাপককে টাকা ফিরিয়ে দিলেন তিনি।
এ দিন গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের প্রতীক্ষালয়ে আসল প্রাপকের হাতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেন শ্রীমন্তবাবু। টাকা ফেরত পেয়ে আসল প্রাপক গোষ্ঠ বাগদি বলেন, ‘‘নাম ভাঁড়িয়ে আমার নামে বরাদ্দ টাকা উনি নিজের ভাইয়ের নামে তুলে নিয়েছিলেন। শাসকদলের নেতা, প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের চাপের মুখে পড়ে আজ সেই টাকা ফেরত দিলেন।’’
শ্রীমন্তবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘প্রথম দিকে বাড়ি প্রাপকের তালিকায় উপভোক্তার বাবার নাম ছিল না। পঞ্চায়েতের পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার ভাইয়ের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়। যখন ভুল ধরা পড়ে তত দিনে ভাই বরাদ্দ টাকা খরচ করে ফেলেছিল। বিষয়টি প্রশাসন এবং দলের নেতাদের জানাই। তাঁরা আসল গোষ্ঠ বাগদির নামেও বাড়ি তৈরির অনুদান বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তা হয়নি। তাই আমি টাকা জোগাড় করে ওঁকে ফিরিয়ে দিলাম৷’’
তৃণমূলের ঠিবা অঞ্চল কমিটির যুব সভাপতি সায়িন কাজী বলেন, ‘‘রূপাদেবী আমাদের দলের প্রাক্তন প্রধান এবং বর্তমান পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হলেও তাঁর স্বামী দলের কেউ নয়। তাঁর দুর্নীতির দায় দলের নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy