স্কুলে স্কুলে ‘কিচেন গার্ডেন’ শুরু করা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। উদ্দেশ্য, মিড-ডে মিলের খরচ কিছুটা বাঁচানো। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কিচেন গার্ডেনের আনাজ দিয়ে মিড-ডে মিলের একাংশের জোগান চলছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বেশ কিছু স্কুলে। স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষের দাবি, সামান্য রক্ষণাবেক্ষণে বছরের পর বছর বাগান থেকে আনাজ মেলে। এতে মিড-ডে মিলের খরচ যেমন বাঁচছে, গাছ বাঁচানোর মূল্যবান শিক্ষাও পাচ্ছে পড়ুয়ারা।
প্রায় দশ বছর ধরে ‘কিচেন গার্ডেন’ রয়েছে নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলে। প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি থেকে নানা মরসুমি শাক মেলে বাগান থেকে। তিনি বলেন, ”মিড-ডে মিলের জন্য যা বরাদ্দ রয়েছে, তাতে প্রতিদিন রকমারি খাবার দেওয়া যায় না। কিচেন গার্ডেন সে অভাব মিটিয়েছে। সপ্তাহে ছ’দিনই আলাদা তরকারিপায় পড়ুয়ারা।”
বহু বছর ধরে আনাজ বাগান রয়েছে বরাবাজারের লাকা প্রাথমিক স্কুলেও। প্রধান শিক্ষক শরৎ পরামানিক জানান, স্কুলের ছাদে ও বাগানে তৈরি করা হয়েছে ‘কিচেন গার্ডেন’। শতাধিক পড়ুয়ার মিড-ডে মিলের আনাজের জন্য বাজারের উপরে ভরসা করতে হয় না। স্কুলেই ফলছে আম, কাঁঠাল, কলা ও পেঁপেও। তাতে মিলের মরসুমি ফলের জোগান মেলে। নিতুড়িয়ার ভুরকুন্ডাবাড়ি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবীর মণ্ডলও জানান, গত ছ’বছর ধরে স্কুলের কিচেন গার্ডেন থেকে পাওয়া আনাজ মিড-ডে মিলে ব্যবহার হচ্ছে।
তবে ভাল ভাবে ‘কিচেন গার্ডেন’ তৈরি করা একা স্কুলের পক্ষে সম্ভব নয়, মত অনেকের। বিন্দুইডি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ জানান, বাগান পরিচর্যা পড়ুয়া বা শিক্ষকেরা করে থাকেন। তবে একটু বড় মাপের বাগান করতে পঞ্চায়েতের সাহায্য দরকার। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে সপ্তাহে কয়েক দিন দু’তিন জন শ্রমিকের ব্যবস্থা করা হলে অনেক সুবিধা হয়।”
এর উল্টো ছবিও রয়েছে। ঝালদা শহরের স্টেশনপাড়া প্রাথমিকের নিজস্ব ভবন নেই। কমিউনিটি হলের বারান্দায় চলে পড়াশোনা। প্রধান শিক্ষক শ্যামলেন্দু ভট্টাচার্য জানান, মিড-ডে মিলের রান্না রাঁধুনি বাড়ি থেকে করে আনেন। পড়ুয়ারা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খায়। তিনি বলেন, ”কোনও মতে মিড-ডে মিল চলছে। কিচেন গার্ডেন তৈরি সম্ভব নয়।” রঘুনাথপুর শহরের দুই স্কুল, চাঁদাগড়িয়ার প্রধান শিক্ষক শুভ্রপ্রতিম চৌধুরী ও হরিজন প্রাথমিকের মৌসুমী চক্রবর্তীরাজানান, কিচেন গার্ডেন তৈরির জায়গাই স্কুলে নেই। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পুরুলিয়ার সম্পাদক রাজকিশোর মাহাতো বলেন, ”শহরাঞ্চলের অনেক স্কুলে কিচেন গার্ডেন তৈরির জায়গা নেই। সরকারের উচিত মিড-ডে মিলে বরাদ্দ আরও বাড়ানো।”
১১ বছরের বেশি সময় ধরে ‘কিচেন গার্ডেন’ রয়েছে বাঁকুড়ার সোনামুখীর মদনপুর জয়নগর প্রাথমিক স্কুলে। সেখানে ফলছে ক্যাপসিকাম, বেগুন থেকে মরসুমি শাক। প্রধান শিক্ষক আনন্দময় ঘোষ বলেন, “পড়ুয়াদের রাসায়নিক সার, কীটনাশক বর্জিত আনাজ খাওয়াবো বলে এক সময় ওই বাগান করি। ওদের নিয়েই পরিচর্যা চলে। এত গাছের প্রতি ওদের ভালবাসাও তৈরি হয়।” ১৫ বছর ধরে ‘কিচেন গার্ডেন’ রয়েছে সিমলাপালের কুসুমডুংরি প্রাথমিক স্কুলেও। লাউ, মরসুমি শাক, ঢেঁড়সে ভরেছে বাগান। প্রধান শিক্ষক দেবব্রত ষন্নিগ্রহী বলেন, “পড়ুয়াদের মধ্যে গার্ডেনিংয়ের অভ্যাস তৈরির জন্য ওই বাগান তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। আনাজ তোলার সময়ে ওদের যে খুশি দেখি, বলার নয়। মিড-ডে মিলেও আনাজ কাজে লাগছে।” নিজেদের ফলানো আনাজ খেতে পড়ুয়াদের আলাদা উৎসাহ থাকে, জানান ওন্দার চান্দাইডাঙা প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক রঘুনাথ খানও।
জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশের মত, যে সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কম, সেখানে মিড-ডে মিলের খরচ সামলানো কঠিন। ‘কিচেন গার্ডেন’ থাকলে সুবিধা হয়। তবে জায়গার অভাবে বাগান করার সুযোগ না-থাকা স্কুলের তালিকাও দীর্ঘ। বড়জোড়ার মাধবপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলে খেলার মাঠ ও কিচেন গার্ডেন করার জায়গা নেই। নির্দেশিকা পেলে সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy