মনোনয়ন জমা দিলেন কাজল শেখ। বুধবার বোলপুর প্রশাসনিক ভবনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
এত দিন পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা বা লোকসভা, প্রায় সব নির্বাচনেই নিজের এলাকায় কার্যত ‘নির্ণায়কের’ ভূমিকা পালন করেছেন। এ বার নিজে প্রথম নির্বাচনী লড়াইয়ে নামলেন নানুরের তৃণমূল নেতা তথা জেলা কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ। তাঁর মনোনয়ন জমার দিনেই জানা গেল দল প্রার্থী করেনি নানুরের আর এক দাপুটে নেতা, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আব্দুল কেরিম খানকে।
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, গরু পাচার মামলায় অনুব্রত জেলে গ্রেফতার হওয়া ইস্তক জেলায় তাঁর প্রভাব ক্রমশ ফিকে হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁর ছবি পর্যন্ত রাখা হয়নি। তিনি কাগজেকলমেই সভাপতি হিসাবে রয়েছেন। এ বার অনুব্রত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত কাজলের প্রার্থী হওয়া এবং কেরিমের বাদ পড়া, জেলায় অনুব্রতের মুঠো আরও আলগা হওয়ারই ইঙ্গিতবাহী বলেই দাবি শাসকদলের ওই অংশের।
এ দিন বোলপুর মহকুমা শাসকের দফতরে জেলা পরিষদের ১৯ নম্বর আসনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা করার পরে কাজল শেখ বলেন, ‘‘দলের রাজ্য নেতৃত্ব প্রার্থী হিসেবে আমার নাম পাঠিয়েছেন। নির্বাচনে জিতে জনগণের জন্য আরও বেশি কাজ করতে চাই।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আমার রাজনৈতিক গুরু। জেলায় তৃণমূলের যে সংগঠন রয়েছে, তা তিনিই তৈরি করেছেন।’’
যদিও কেরিমের গলায় ‘অন্য সুর’। বাদ পড়ে দলের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি ‘গুরুতর’ অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এ দিন সরাসরি বলেছেন, ‘‘শুধু আমাকেই নয়, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের অনেককেই টিকিট দেওয়া হয়নি। কেন হয়নি বলতে পারব না।’’ তাঁর দাবি, দলের নেতারা ব্ল্যাকমেল করেছেন। টিকিট দেওয়া হবে না, সেকথা জানতে দেননি।
কেরিমের কথায়, ‘‘আমরা অভিভাবকহীন। অনুব্রত মণ্ডল ফিরে না আসা পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকব। উনি ফিরে এলে আবার সক্রিয় হব।’’ জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি তথা জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’
নানুর তথা জেলার রাজনীতিতে কাজল বরাবরই চর্চিত নাম। অনুব্রতের সঙ্গে তাঁর বিরোধও দীর্ঘদিনের। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুরে অধিকাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। অথচ ওই নির্বাচনেই কাজল এবং নানুরের তৎকালীন বিধায়ক গদাধর হাজরার জন্য একটি মাত্র আসনে লড়তে নেমে সিপিএম প্রার্থীর কাছে হারতে হয়েছিল অনুব্রত-অনুগামী হিসাবে পরিচিত নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যকে। পরে গদাধর অনুব্রত শিবিরে যোগ দেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার মাসুল চোকাতে হয় গদাধরকে।
গদাধর শিবিরের অভিযোগ, কাজল পরোক্ষে সিপিএমকে সাহায্য করেন। গদাধরকে হারতে হয় সিপিএমের কাছে।
সেই কাজলই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অসিত মালকে অনেকটা ‘লিড’ দেন নানুরে। অনুব্দরত এর পরে কাজলকে ব্লক কার্যকরী সভাপতি মনোনীত হন। এ বছর জানুয়ারিতে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কোর কমিটির সদস্যও করেন। পাশাপাশি বগটুইয়ের দায়িত্বও দেন। তখন থেকেই সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজলের নাম চর্চায় ছিল। ঠিক সেটাই হল।
তৃণমূলের একাংশের আবার মত, ‘প্রত্যাশিত’ ভাবেই বাদ পড়েছেন জেলা পরিষদের দু’বারের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান। গরুপাচার কাণ্ডে কেরিমকে একাধিকবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাঁর বাড়িতে তল্লাশিও চালায়। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সামনে রেখে প্রায় ৩৫ বিঘে জমি মেলার মাঠের নামে জোর করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কেরিমের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছয় সেই অভিযোগ।
সম্প্রতি ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে জেলায় এসে কেরিমকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন অভিষেক। দলীয় সূত্রের খবর, এ বারের নির্বাচনে কেরিম যে টিকিট পাবেন না, তা তখনই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy