Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সংবর্ধনা পেয়ে কেঁদে ফেললেন জবা, কৃষ্ণারা

সংবর্ধনা পেয়ে আর নিজেদের ধরে রাখতে পারলেন না নারায়ণী গোস্বামী, গায়েত্রী মুখোপাধ্যায়রা। একজন যখন মঞ্চে, দর্শকাসনে অন্যজনের চোখের কোণ চিকচিক।

সম্মান: অভিনেত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

সম্মান: অভিনেত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৫
Share: Save:

সংবর্ধনা পেয়ে আর নিজেদের ধরে রাখতে পারলেন না নারায়ণী গোস্বামী, গায়েত্রী মুখোপাধ্যায়রা।

একজন যখন মঞ্চে, দর্শকাসনে অন্যজনের চোখের কোণ চিকচিক।

কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললেন কেউ কেউ। কী বলবেন, ভেবে পাচ্ছেন না!

এই প্রথম শখের যাত্রা দলের পেশাদার অভিনেত্রী তথা ‘ফিমেল’দের সংবর্ধনা দিল লাভপুরের বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী। সোমবার জেলা নাট্য উৎসব উপলক্ষ্যে স্থানীয় অতুলশিব মঞ্চে ৫ শিল্পীকে সংবর্ধনা দেওয়া হল।

ওই সাংস্কৃতিক সংস্থা সূত্রেই জানা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভাবের তাড়নায় কিংবা কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সমাজের মূলস্রোত থেকে ছিটকে গিয়ে ওই পেশায় নাম লেখান মহিলারা। যৎসামান্য পারিশ্রমিকের ঠিকা চুক্তিতে শখের যাত্রাদলে মহিলা চরিত্রে শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেন। কিন্তু কোথাও শিল্পীর সম্মান জোটে না বলে খেদ তাঁদের।

১৮ বছর বয়েসেই ওই পেশায় নাম লেখান ৫৩ বছরের কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়। লাভপুর গরুর হাট এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার পালায় অভিনয় করেছি। সম্মান জোটেনি। আজ আশ্চর্য অনুভূতি হচ্ছে।’’

৫৮ বছরের জবা ভট্টাচার্য দলে ঢোকেন ১০ বছর বয়েসে। তিনিও প্রায় ২০০০ বইয়ে অভিনয় করেছেন। জবা বলছিলেন, ‘‘আমরা যে সব যাত্রাদলের অধীনে কাজ করি সেই সব দলের ‘শিল্পী বন্দনা’, ‘শিল্পী সংসদ’-এর মতো সব গাল ভরা নাম। কিন্তু শিল্পী হিসাবে সামান্য সম্মানও জোটে না। খোলা গরুর গাড়িতে মাইক পোশাকের বাক্সের উপর বসে আমরা যাত্রা স্থলে যাই। পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গেই একত্রে গবাদি পশুর মতোই গোয়ালঘরে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া হয়।’’

৫৫ বছরের নারায়ণী গোস্বামী, ৪৫ বছরের বেবী চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘শিল্পী নয় আমাদের সামগ্রী ভাবা হয়। দলের সাইন বোর্ডে লাইট, মাইক, পোশাকের পাশাপাশি লেখা হয় উন্নতমানের ‘ফিমেল’ ভাড়া পাওয়া যায়।’’

ফিমেলদেরই একজন জানালেন, ‘‘ভালো অভিনয়ের জন্য রাজা-জমিদারের কায়দায় কেউ কেউ সেপটিপিনে ১০-২০ টাকার নোট পোশাকে গেঁথে দিতে আসেন। ভয় লাগে। আসলে পারিশ্রমিক যা পাই তাতে পেট ভরে না। রঙ মেখে সঙ সাজাই সার হয়। না মেলে সম্মান, না চলে সংসার। এই প্রথম কেউ আমাদের সত্যি কারের সম্মান দিল।’’

এ দিন ওইসব শিল্পীদের হাতে স্মারক সম্মান তুলে দেন নাট্যকর্মী সুব্রত নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিপ্রসাদ সরকার, মহাদেব দত্ত, অতনু বর্মণ, সুপ্রভাত মিশ্র প্রমুখ।

হরিপ্রসাদ এবং মহাদেববাবু একসময় ওইসব শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন।

তাঁরা জানান, এখন যাত্রা নাটকে মেয়েদের যোগদান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু একসময় তা ছিল না। তখন পুরুষদের মহিলা সেজে অভিনয় করতে হত। সেই ঘরানার পরিবর্তন ঘটে গায়েত্রীদেবীদের জন্যই। কিন্তু সেই অর্থে তাঁরা প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি।

বলেন, ‘‘ভালো লাগছে কেউ ওদের কথা অন্যভাবে ভাবল। এই ধরনের সম্মান তো এর আগে তাদের কেউ দেয়নি।’’

আয়োজক সংস্থার সম্পাদক উজ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ওইসব শিল্পীদের বঞ্চনা, অসম্মানের কথা জানতে পারি। তখনই ঠিক করি ওদের সম্মান জানানো হবে। পাশাপাশি ওদের রিহার্সালের জন্য সংস্থার ঘরও ব্যবহার করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

felicitation Jatra Actresses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE