জলপা টুডুর খুনে অভিযুক্তদের বুধবার রামপুরহাট কোর্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
দেনা মেটাতে পূর্ব পরিকল্পনা করেই রামপুরহাটের দেখুড়িয়া গ্রামের আদিবাসীপাড়ার টোটোচালক জলপা টুডুকে খুন করে প্রমাণ লোপের চেষ্টা করেছিল ওই গ্রামেরই বাসিন্দা পড়শি যুবক অচিন্ত্য বায়েন। অচিন্ত্য পরিকল্পনামাফিক কাজও প্রায় শেষ করে ফেলেছিল। কিন্তু নলহাটিতে চোরাই টোটো বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। এর পরে পুরো ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যায় বলে দাবি পুলিশের। অচিন্ত্যের সঙ্গে তাকে পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ গ্রামেরই যুবক তাপস বায়েনকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিকে বুধবার দুপুরে জলপার মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছতেই মৃতের পরিবারের লোকজন এবং আত্মীয়স্বজন ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে মৃতদেহ বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। ধৃত অচিন্ত্য বায়েনের বাড়ির সামনে মৃতদেহ রেখে দিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অচিন্ত্য বায়েনের বাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয়। পুলিশ এলাকায় পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে বলার পরে জলপার পরিবার দেহ নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, জলপার টোটো কী ভাবে হাতিয়ে নেওয়া যায় সেই পরামর্শ অচিন্ত্যকে দিয়েছিল গ্রামেরই যুবক তাপস বায়েন। তাপসের পরিকল্পনা মতো অচিন্ত্য জলপার টোটো ভাড়া করে মাঝরাতে মল্লারপুর যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। মল্লারপুর যাওয়ার পথে মাঠের মধ্যে জলপাকে খুন করে মৃতদেহ পুকুরের জলে ফেলে দিয়ে টোটো নিয়ে নলহাটি চলে গিয়েছিল অচিন্ত্য। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রথমে সোমবার রাত দুটোর সময়ে টোটো নিয়ে মল্লারপুরে যাওয়ার কথা ছিল জলপার। পরে অচিন্ত্যর চাপে রাত বারোটার সময়ে জলপা বেরিয়েছিল। তাদের একসঙ্গে বেরিয়ে যেতে পাড়ার অনেকেই দেখেছিলেন বলে জলপার স্ত্রী প্রতিমা টুডু পুলিশকে জানিয়েছেন।
প্রতিমা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাত একটার সময় জলপা তাঁকে জানিয়েছিল খরুণ মোড়ে আরও অনেকের চাপার জন্য টোটো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার পরে জলপার সঙ্গে প্রতিমার আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, তারাপীঠ-রামপুরহাট রাস্তার উপরে খরুণ মোড় থেকে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক যাওয়ার যে রাস্তা আছে তা ধরে অচিন্ত্য জলপাকে টোটো নিয়ে যেতে বলে। পুলিশের দাবি, খরুণ গ্রাম পেরিয়ে মুখাগ্নিতলার কাছে একটি পুকুরের ধারে টোটো দাঁড় করিয়ে হাতুড়ি দিয়ে জলপার মাথার পিছনে আঘাত করে খুন করে অচিন্ত্য। মৃতদেহ লোপাটের জন্য পরে পুকুরের জলে ফেলে দেয়। এবং গভীর রাতে একা টোটো নিয়ে নলহাটির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল।
সোমবার গভীর রাতে অচিন্ত্যকে নলহাটি বাজারে একা টোটো নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ টোটো-সহ অচিন্ত্যকে আটক করে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশি জিঞ্জাসাবাদে অচিন্ত্য জানায়, তার জামাইবাবুর টোটো বিক্রি করতে সে নলহাটিতে এসেছে। কিন্তু পুলিশ রামপুরহাট, মল্লারপুর থানা এলাকায় কোনও টোটো চুরি গিয়েছে কি না খোঁজ নিতে শুরু করে। অন্য দিকে, এর মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে রামপুরহাট থানার খরুণ গ্রামের মাঠে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হতেই রহস্য দানা বাঁধে। মৃতদেহের পরিচয় মিলতে পুলিশের কাছে জলপার মৃত্যুর রহস্য পরিষ্কার হয়। অচিন্ত্যকে আটক করে রামপুরহাট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাতে প্রতিমার অভিযোগের ভিত্তিতে অচিন্ত্য ও তাপসকে গ্রেফতার করে। তাদের বুধবার রামপুরহাট আদালতে তুললে বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy