Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ির কাছে ধৃত জেল পালানো সাধু

শনিবার বিকেলে গুনতির সময় জানা যায়, সাধু জেল থেকে বেপাত্তা হয়েছে। কাশীপুরের শিয়াদা গ্রামে তার বাড়ি। খুনের অভিযোগে বিচারাধীন বন্দি জেল থেকে পালানোয় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন মহলে।

সাধু কৈবর্ত্য। নিজস্ব চিত্র

সাধু কৈবর্ত্য। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

জেল থেকে পালিয়েও রক্ষা পেল না খুনের মামলার বন্দি সাধু কৈবর্ত্য। পুলিশের তৎপরতায় পালানোর দু’দিনের মধ্যেই ধরা পড়ে গেল রঘুনাথপুর উপসংশোধনাগার থেকে পালানো বন্দি।

সোমবার সন্ধ্যায় কাশীপুর থানার পুলিশের সাহায্যে কালীদহ পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচমহলি গ্রামের প্রান্তে জঙ্গল থেকে সাধুকে গ্রেফতার করে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। আজ মঙ্গলবার তাকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হবে। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংশোধনাগার থেকে ওই বন্দি পালানোর পরেই বিষয়টি সমস্ত থানাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।”

শনিবার বিকেলে গুনতির সময় জানা যায়, সাধু জেল থেকে বেপাত্তা হয়েছে। কাশীপুরের শিয়াদা গ্রামে তার বাড়ি। খুনের অভিযোগে বিচারাধীন বন্দি জেল থেকে পালানোয় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন মহলে। জেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ঘটনাটি জানানোর পরেই রঘুনাথপুর মহকুমার সমস্ত থানা সাধুকে খুঁজতে নেমে পড়ে।

পুলিশ সূত্রের খবর, সোর্স মারফৎ খবর পেয়ে এ দিন সন্ধ্যার দিকে কাশীপুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচমহলি গ্রামের ওই জঙ্গলে যায় রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। সেখান থেকেই ধরা পড়ে ওই বন্দি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, শনিবার বিকেলে জেলের দেওয়াল টপকেই পালিয়েছিল সাধু। বন্দিরা ওই জেলের মধ্যেই আনাজ-সহ বিভিন্ন ধরনের চাষবাস করে। শনিবার বিকেলে সাধু প্লাস্টিকের বড় লম্বা পাইপ দিয়ে চাষে জল দিচ্ছিল। জেলের নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে সেই পাইপের সঙ্গে গামছা বেঁধে জেলের এক প্রান্তে থাকা দরজার উপরে কোনও ভাবে তা জড়িয়ে ফেলে। তারপরে সেই পাইপ বেয়ে উঠে পড়ে দেওয়ালের উপরে। সেখান থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে সে চম্পট দেয়।

তবে কমবেশি ৩০ ফুট উঁচু দেওয়ালের উপরে পাইপের সাহায্যে ওঠা এবং সেখান থেকে নিচে ঝাঁপ মারার মতো শারীরিক দক্ষতা বছর পঁয়তাল্লিশের ওই বন্দির মধ্যে রয়েছে দেখে তাজ্জব পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘পঁয়তাল্লিশ বছর বয়েসের এক জনের পক্ষে প্লাস্টিকের পাইপ বেয়ে প্রায় তিরিশ ফুট দেওয়ালের উপরে ওঠা এবং সেখান থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে কোনও চোট আঘাত না পাওয়া অবাক করার মতোই ঘটনা।’’

গ্রেফতার করার পরে ওই বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, শনিবার বিকেলে জেল থেকে পালিয়ে সাধু গিয়েছিল শাঁকা স্টেশনে। ট্রেন না পেয়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করে। রাতের দিকে পৌঁছয় আদ্রায়। এই রেল শহরের একপ্রান্তের মনপুরা জঙ্গলে রাত কাটিয়ে সকালের দিকে পৌঁছয় শিয়াদা গ্রামে বাড়ির কাছাকাছি এলাকায়। স্থানীয় পরিচিত কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে খাবার কিনে যায় শিয়াদা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাঁচমহলি গ্রামের প্রান্তে জঙ্গলে। পুলিশের দাবি, জেল থেকে পালানোর পরে ধরা পড়া পর্যন্ত প্রায় পুরো সময়টাই শিয়াদা গ্রামের আশেপাশে জঙ্গলেই কাটিয়েছে সাধু।

দাদা শ্যামাপদ কৈবর্ত্যর পুত্রবধূ পুষ্পাকে ভোজালি দিয়ে খুনের অভিযোগে পুলিশ গত বছরের মে মাসে গ্রেফতার করেছিল সাধুকে। তিন মাসের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দেওয়ায় সাধু আর জামিন পায়নি। টানা জেলে বন্দি ছিল সাধু। পুলিশকে সে জানিয়েছে, তার সঙ্গে জেলে আসা অন্যান্য অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত হয়ে গেলেও সে বাইরে বেরোতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাই জেল থেকে পালানোর ছক এঁটেছিল সে।

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন রঘুনাথপুর থানার হাজতে বসে কেন তার জামিন হবে না এই প্রশ্ন বার বার সে পুলিশ কর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছে। সবাই জামিন পেয়ে যাচ্ছে, অথচ তার বেলাতেই বিচারক জামিন দিচ্ছেন না কেন, এ নিয়ে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে সাধুকে।

তবে দিনের বেলায় নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে উঁচু দেওয়াল বেয়ে বন্দি পালনোর ঘটনা বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘বন্দি-পালানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই জেলের দুই নিরাপত্তারক্ষীকে শো-কজ করেছে কারা দফতর। জেল কর্তৃপক্ষে সঙ্গে আলোচনায় বসে নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jail convict Escape Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy