(বাঁ দিকে) কালু মিঞা, (ডান দিকে) কালু মিঞার জায়গায় রাখা রথ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
সোজা রথ। সাত দিন পরে উল্টো রথ। সারা বছরে মাত্র দু’দিন রথ নামে পথে। বছরের বাকি দিনগুলি সেই রথ পাকা ছাদের নীচে রাখা থাকে। এক সময় রথ রাখা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন মাড়গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম কয়েম্বার বাসিন্দারা। তাঁদের মুশকিল আসান হয়ে উঠলেন গ্রামেরই কালু মিঞা। তাঁর দেওয়া জায়গাতেই বছরভর যত্নে থাকে কয়েম্বার রথ।
গ্রামের বাসিন্দারা পাকা দালানের ছাউনি বানিয়ে কালু মিঞার জমিতে ছর চারেক থেকে রথ রাখেন কয়েম্বা গ্রামের মালপাড়ার বাসিন্দারা। সোজা এবং উল্টোরথের দিন রথ বের করে যথারীতি গ্রাম ঘুরে আবার কালু মিঞার জায়গায় রেখে দেওয়া হয়। বছর চারেক আগে ছিটেবেড়ার খড়ের ছাউনি ছিল রথের জন্য। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সেই ঘরে রথ রাখা হত। ধীরে ধীরে সেই ছিটেবেড়ার ঘর গ্রামের হিন্দু মুসলিমের সহযোগিতায় পাকা দালান হয়েছে।
মাড়গ্রাম থানার প্রত্যন্ত গ্রাম কয়েম্বা। গ্রামে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বাস। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানালেন, একশো বছর আগে গ্রামের শেষপ্রান্তে বাইরে থাকা আসা এক সাধু গড়ে তোলেন বৈষ্ণব আশ্রম। সেই আশ্রম থেকে কাঠের রথ বের হত। বছর বারো আগে এক বার অযত্নে রথ নষ্ট হয়। আশ্রম থেকে এখনও রথ বের হয়।
বছর চারেক আগে গ্রামের মানুষজন নতুন করে রথ তৈরি করে। সেই রথ তৈরি কাঠের জন্য তিনটি নিমগাছ গ্রামের বাসিন্দারা দিয়েছেন। পাশের গ্রাম হরিরামপুরের এক সংখ্যালঘু বাসিন্দাও নতুন রথ নির্মাণে কাঠের জন্য নিমগাছ দিয়েছেন। এই গ্রামের মুসলিমেরাও রথের জন্য লোহার চারটি চাকা তৈরি করতে চাঁদা দিয়ে সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছেন বুধু মাল, বাচ্চু মালেরা। গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি সুবীর সূত্রধর, প্রণব ভাস্কর রথ নির্মাণে কোনও মজুরি নেননি।
কয়েম্বার বাসিন্দা সূর্য সরকার, অজয় মালরা জানালেন, গ্রামের মালপাড়ায় কালীপুজো, সরস্বতী পজো, লক্ষ্মী পুজো আগে একটি জায়গায় প্যান্ডেল করে হতো। কোনও পাকা দালানের মণ্ডপ ছিল না। তার পাশে এক শতকের বেশি খালি জায়গা দীর্ঘদিন থেকে পড়ে ছিল। তাঁরা বলেন, ‘‘সেখানে পাকা মণ্ডপ গড়ে তুলে রথ রাখার জন্য কালু মিঞা র কাছে জায়গা চেয়েছিলাম। উনি স্বতঃফূর্ত ভাবে সেই জায়গা দান করেছেন। রথ রাখা নিয়ে আর আমাদের চিন্তা নেই।’’
পেশায় চাষি, বছর সত্তরের আজিজুল ইসলাম ওরফে কালু মিঞার কথায়, ‘‘জায়গাটা ফাঁকা পড়ে ছিল। বিক্রি করে কত পয়সা পেতাম? তার চেয়ে গ্রামের একটা ভাল কাজে দিতে পেরে আমি খুবই খুশি। গ্রামের ভাল কাজে আমি সব সময়ই পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy