শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশকর্মীরা।ছবি: সুজিত মাহাতো
তৃণমূল কর্মী প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে বা কারা এবং কেন গুলি করল, তদন্তে নেমে আপাতত সে প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ। তবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এ ভাবে গুলি চালানোর ঘটনায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) পিনাকী দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
গত শনিবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে পুরুলিয়া শহরের হাটতলা এলাকায় গুলিবদ্ধ হন প্রদীপবাবু। তাঁর পেটের ডান দিকে গুলি লাগে। দ্রুত তাঁকে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের ‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এ ভর্তি থাকা প্রদীপবাবুর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ জানায়, মোটরবাইকে বাড়ি ফেরার পথে ওই দিন কোর্ট মোড় ও হাটের মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পুরুলিয়া শহরের কেতিকার বাসিন্দা প্রদীপবাবুর বাসের ব্যবসা রয়েছে। সন্ধ্যার পরে বাস মালিক সংগঠনের কার্যালয়ে কাজকর্ম মিটিয়ে রোজের মতো বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। প্রদীপবাবু নিজেই মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন। সঙ্গী ছিলেন এক জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাটতলা রাস্তায় কোর্ট মোড়ের পরে চিত্তরঞ্জন বয়েজ় হাইস্কুলের গেট পার হয়ে একটি বাঁক রয়েছে। সেখানে রাস্তায় নিকাশি নালার উপরে আড়াআড়ি ভাবে বসানো সিমেন্টের স্ল্যাবটি স্পিডব্রেকারের মতো কাজ করে। পাশাপাশি, ওই জায়গায় তুলনামূলক ভাবে আলো কম থাকে। দিনভর থিকথিকে ভিড় থাকলেও সন্ধ্যার পরে ওই রাস্তার বেশিরভাগ দোকানপাটই বন্ধ হয়ে যায়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, গুলি চালানোর জন্য দুষ্কৃতীরা তাই জায়গাটিকে বেছে নেয়।
প্রদীপবাবুর মোটরবাইকে সওয়ার প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘চিত্তরঞ্জন স্কুলের গেট পেরিয়ে নিকাশি নালাটির কাছে বাইকের গতি কমতেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক জন কাছ থেকে গুলি চালায়। ওই জায়গায় আলো কিছুটা কম। তবে মোটরবাইকের আলোয় এক ঝলক দেখেছিলাম, সবুজ রঙের টি শার্ট, মুখ মাস্কে ঢাকা। মাথায় টুপি রয়েছে। গোটা ব্যাপারটা এতই দ্রুত ঘটে যে, প্রথমে বুঝতেই পারিনি। তার পরে প্রদীপদাই বলে, গুলি লেগেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে গুলি ছুড়েছিল, তার পাশে আর কেউ ছিল বলে দেখতে পাইনি। তবে কিছুটা পিছনে, স্কুলের গেটের দিকে খানিকটা দূরে মোটরবাইক নিয়ে কেউ দাঁড়িয়েছিল বলে মনে হয়েছিল।’’
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, গুলি লেগে প্রদীপবাবু মাটিতে পড়ে যান। তাঁর চিৎকার শুনে হাটের মোড় থেকে ছুটে আসেন লোকজন। এক জনের কথায়, ‘‘গুলি চলেছে বলে চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। আমরাই প্রদীপবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। গুলিটা আগে সম্ভবত প্রদীপবাবুর মোটরবাইকে লেগেছিল। তার পরে পেটে লাগে। কেননা বাইকে গুলির দাগ রয়েছে।’’ এ দিকে, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিলেও প্রদীপবাবুকে লক্ষ করে গুলি চালানোর চেষ্টা হয়েছিল।
কেতিকা (৯ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রদীপবাবু গত লোকসভা ভোটের পরে, বিজেপিতে যোগ দেন। তবে সে ভাবে সক্রিয় ছিলেন না। সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। শনিবার দিনভর পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় দড়ি বেঁধে বাস টানা-সহ দলীয় ধরনা মঞ্চেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
প্রদীপবাবুকে দেখতে রবিবার হাসপাতালে যান জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া পুরুলিয়া বিধানসভার কংগ্রেস প্রার্থী পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘পেটে গুলি লেগেছে। তবে অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলেই জানতে পারলাম। ঘটনায় ‘নার্ভাস’ হয়ে পড়েছে। কথা বলার অবস্থায় এলে পুলিশ নিশ্চয়ই কথা বলবে।’’ এ দিন হাসপাতালে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) পিনাকী দত্ত-সহ পুলিশ কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy