সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
‘কাটমানি’ ফেরতের দাবি নিয়ে আন্দোলন থামছে না বাঁকুড়া জেলায়।
এ বার সোনামুখীর তৃণমূল পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ‘কাটমানি’-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পোস্টার পড়ল তাঁর নিজের শহরে। সেই সঙ্গে এক ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধেও নালিশ তোলা হয়েছে। আবার বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্যা তথা ওন্দা ব্লক যুব তৃণমূলের সভানেত্রী বাণী হাজরার বিরুদ্ধে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নামে তোলা নেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন স্বনির্ভর দলের সদস্যারা। শনিবার এই দুই ঘটনায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়তে হল জেলা তৃণমূলকে। যদিও দুই নেতা-নেত্রীই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ওন্দার ঘটনায় অবশ্য ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন। বিডিও (ওন্দা) বিমলকুমার শর্মা বলেন, ‘‘ওই ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের কাছে স্মারকলিপি জমা পড়েছে। পুলিশ দেখছে। আমরাও তদন্ত করছি।’’
শুক্রবারই বাঁকুড়া ২ ব্লকের কেশিয়াকোলে এক তৃণমূল নেতাকে রাস্তায় পেয়ে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ তুলে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত হন ওই নেতা। তারপরে এ দিন নতুন করে কাটমানির নতুন অভিযোগ সামনে এল।
জেলা তৃণমূলের পরিচিত মুখ সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ দিন পোস্টার সাঁটায় বিজেপির সোনামুখী নগর মণ্ডল। এ দিন সকালে সোনামুখী শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে ওই পোস্টার দেখা গিয়েছে। পোস্টারে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গরিব মানুষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা কাটমানি নেওয়া হল কেন? চেয়ারম্যান জবাব দাও’। এমনকি পুরপ্রধান ‘কোটিপতি’ কী ভাবে হলেন, সে ব্যাপারেও জবাবদিহি চাওয়া হয়।
বিজেপির সোনামুখী নগর মণ্ডলের সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, “আমরাই পোস্টার দিয়েছি পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সোনামুখী পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকে পুরপ্রধান-সহ তৃণমূলের বহু কাউন্সিলর টাকা নিয়েছেন। জনগন ক্ষুব্ধ। তাই প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’
পুরপ্রধান সুরজিৎবাবু অবশ্য এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেন, “রাজনৈতিক কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে বিজেপি। যদি একজনও মানুষ আমার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার প্রমাণ দেন, তাহলে পুরপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করব।” তিনি যুক্ত করেন, “বিজেপি আমার নাম করে পোস্টার দেওয়ায় অসন্মানিত হয়েছি। এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।”
বাণীদেবীর বিরুদ্ধে অবশ্য কিছু দিন আগেই ‘কাটমানি’ খাওয়ার অভিযোগ তুলে ওন্দা থানায় স্মারকলিপি দেন স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সরকারি ভাবে পাওয়া বিভিন্ন অনুদান থেকে কাটমানি নিয়েছেন ওই নেত্রী। প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে জোর করে কয়েক হাজার করে টাকা নেওয়া হয়। কেউ দিতে অস্বীকার করলে, প্রভাব খাটিয়ে জেলে পুরে দেওয়া বা এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। যদিও বাণীদেবী অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
এ দিন বাণীদেবীর বাড়ির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হন এলাকাবাসী। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা। তাঁদের দাবি, স্থানীয় মহিলাদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ করে দেওয়ার জন্য কয়েক হাজার টাকা করে কাটমানি নিয়েছেন ওই তৃণমূল নেত্রী। এ ছাড়া সরকারি চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা খাওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
বাণীদেবীর দাবি, “এ সবই বিজেপির চক্রান্ত। এলাকায় আমার দুর্নাম রটানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” এদিকে বাণীদেবীর বিরুদ্ধে যে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা, তার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ওন্দা ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ যৌথ ভাবেই বাণীদেবীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে।”
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy