ভাঙা স্কুল বাড়ি। অগত্যা পাশের মন্দিরে বসে পড়াশোনা। —নিজস্ব চিত্র।
‘উন্নয়ন’ শব্দটি এখানে এসে ধাক্কা খায়। এখানে গাছতলায় বসে মিড ডে মিল খায় কচিকাঁচা পড়ুয়ারা। মন্দিরের চাতালে হয় পড়াশোনা। স্থান— পুরুলিয়ার আড়ষা থানা এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম রাধানগর।
স্কুলবাড়ির সামনে ফলক আছে। মোটা কালো হরফে লেখা ‘রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থাপিত ১৯৭৫’। কিন্তু ওটুকুই। ওই স্কুলবাড়ির চাল নেই। তাই সেখানে ক্লাস করার প্রশ্নই ওঠে না। বাচ্চারা পড়াশোনা করে কখনও গাছের ছায়ায়, তো কখনও হরি মন্দিরের চাতালে। স্কুল থেকে মিড ডে মিলের খাবার দেওয়া হয়। সেটাও ওই গাছতলায় বসে খাওয়া। খাবার সময়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যায় পথকুকুর। খানিক দূরেই বাঁধা থাকে গবাদি পশু। এ ভাবেই চলছে স্কুল।
কিন্তু কেন দিনের পর দিন এ ভাবে লেখাপড়া শিখছে গ্রামের কচিকাঁচারা? কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল মাস কয়েক আগে পুরনো স্কুলবাড়ি সংস্কারের জন্য ছাদ ভেঙে ফেলেছে ব্লক প্রশাসন। কিন্তু সংস্কারের কাজ আর এগোয়নি। স্কুলবাড়ি ঠিক করার জন্য ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে ব্লক প্রশাসন। তবে গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘ছাদের ওপর শুধু টিন চাপিয়ে দিলে তো চলবে না। স্কুলের যা অবস্থা তাতে পুরোটাই সংস্কার করা দরকার।’’ অন্য দিকে, স্কুলঘর সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজ এগোয়নি। তাই স্কুলের পাশে হরি মন্দিরে চলছে অ-আ-ক-খ শেখা।
ওই প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক নিতাইচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘আমি এই স্কুলে যোগ দিই ২০১৭ সালে। তখন থেকেই দেখেছে স্কুলবাড়ির অবস্থা বেহাল। চলতি বছরের মার্চ মাসে অবশ্য সংস্কারের জন্য ভাঙা হয় বাড়িটি। কিন্তু বিভিন্ন টানাপড়েনে কাজ এখন বন্ধ।’’
রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা মোট ২ জন। এই মুহূর্তে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪১। স্কুলের এমন দশা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সংশ্লিষ্ট চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর দে বলেন, ‘‘সংস্কারের জন্য স্কুলবাড়ি যখন ভাঙা হয়, তখন দেওয়ালে একাধিক ফাটল ছিল। আমরা চেয়েছিলাম ছাদে টিনের ছাউনি দিতে। কিন্তু গ্রামবাসীরা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। অন্য দিকে, ওই অশক্ত দেওয়ালে ছাদ ঢালাই সম্ভব নয়।’’
সোমনাথ মাঝি, ধীরেন টুডু, ভজেন্দ্র মাঝিরা বলছেন ভিন্ন কথা। ওই গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামে এই একটি মাত্র স্কুল। এখানে শুধু মাত্র টিনের ছাউনি দিলেই হবে না। পুরো স্কুল ভবন ভাল করে নির্মাণ করতে হবে।’’
আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে গ্রামবাসীদের এই দাবি এবং স্কুলপড়ুয়াদের অবস্থার কথা শুনে আড়ষা ব্লকের বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন, ‘‘আমরা গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে বরাদ্দ টাকায় এই স্কুলের পুননির্মাণ সম্ভব নয়। কিন্তু ওঁরা বুঝতে চাইছেন না। তবু আমরা ওঁদের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করছি শীঘ্রই এই সমস্যা মিটে যাবে।’’
অগত্যা তত দিন হরি মন্দিরের চাতালে চলবে পড়াশোনা। মধ্যাহ্নভোজ হবে গাছতলায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy