এককাট্টা: বুধবার রাতের হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘বিশ্বভারতী ছাত্রছাত্রী ঐক্য’র িমছিল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
ক্যাম্পাসে সিআইএসএফ মোতায়েনের ভাবনাকে ঘিরে নতুন করে বিতর্কের মেঘ ঘনাচ্ছে বিশ্বভারতীতে। বুধবার রাতের অন্ধকারে বিদ্যাভবন বয়েজ় হস্টেলে যেভাবে ছাত্রদের উপর হামলা ঘটনা ঘটেছে, তাতে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অনেক ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীরা দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। মূলত তারই প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে সিআইএসএফ মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রের কাছে নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে চলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার শুক্রবার বলেন, ‘‘কঠোর ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা যায়, তার জন্য বিশ্বভারতীতে সিআইএসএফ মোতায়েন করার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। আমরা খুব তাড়াতাড়ি মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে এই বিষয়ে আবেদন জানাব।’’ এ কথা জেনে ফের জোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
গত এক বছরে নানা ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের ‘গাফিলতি’ চোখে পড়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। শুধু বুধবার রাতের ঘটনাই নয়, গত বছর বিশ্বভারতীতে ফি-বৃদ্ধি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সময় উপাচার্য-সহ আধিকারিকদের রাতভর লিপিকায় আটকে থাকতে হয়েছিল। বিশ্বভারতীর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা থাকা সত্ত্বেও কেন দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও থাকতে হল, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন উপাচার্য। এর পরে টানা ১৮ দিন ধরে বিশ্বভারতীর কর্মীরা কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে আন্দোলন করলে তখনও নিরাপত্তাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে।
বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন সময় বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন আন্দোলনে নিরাপত্তারক্ষীরা সঠিক ভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।’’ বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ওই সব কারণে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সিআইএসএফ মোতায়েনের আর্জি জানিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই খবর জানাজানি হতেই ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। ‘নো সিআইএসএফ’ ডাক দিয়ে পোস্টারিং হয় ক্যাম্পাস জুড়ে। কেন্দ্র ‘নীতিগত সম্মতি’ দিলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য সিআইএসএফ মোতায়েন হয়নি ক্যাম্পাসে। বিষয়টা সামায়িক ভাবে চাপাও পড়ে গিয়েছিল।
তা হলে আবার কেন বাহিনী রাখার ভাবনা?
সূত্রের খবর, ৮ জানুয়ারি শ্রীনিকেতনের সমাজকর্ম বিভাগে সিএএ বিষয়ক ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিশ্বভারতীর আমন্ত্রণে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন বিজেপি সমর্থিত রাজ্যসভার সাংসদ সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। সে দিনও বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা সমাজকর্ম বিভাগের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বক্তৃতা ভন্ডুল করার চেষ্টা করে। সেদিনও আন্দোলনকারীদের তুলনায় নিরাপত্তারক্ষীরা সংখ্যায় কম থাকায় বিক্ষোভ থামানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিক্ষোভের জেরে স্বপনবাবু, উপাচার্য-সহ আধিকারিকদের পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত বক্তৃতাসভার স্থানও বদলাতে হয়। ওই ঘটনার পরে পরেই বুধবার রাতে বিদ্যাভবন হস্টেলের সামনে যেভাবে ছাত্রদের উপর হামলা চালানো হয়েছে, তাতেও রক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও অধ্যাপকেরা।
সেই সূত্রেই নতুন করে সিআইএসএফের ভাবনা বলে মনে করা হচ্ছে। অনির্বাণবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা বারবার বলেছি, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনও রকম আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বরদাস্ত করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তা বন্দোবস্ত কঠোর করতেই হবে।’’
এ কথা জেনে ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজেরা ঠিক ভাবে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তাই সিআইএসএফ মোতায়েন করতে চাইছেন। এর প্রতিবাদ হবে। বিশ্বভারতীর পড়ুয়া অমিত মণ্ডল, রিয়া গড়াই, বিউটি সাহারা বলেন, ‘‘এর আগেও সিআইএসএফ মোতায়েনের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। আবার যদি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সিআইএসএফ মোতায়েন করতে চান, আমরা আর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর মুক্ত চিন্তার পরিসর। সেখানে সিআইএসএফ কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy