প্রতীকী ছবি
পুর এলাকায় সরকারি আবাস যোজনা ‘হাউস ফর অল’ বা ‘সবার জন্য বাড়ি’-ই কী পুরভোটে তুরুপের তাস হতে চলেছে? শাসক দলের অন্দরে উঁকি মারলে, তেমন গুঞ্জনই শোনা যাচ্ছে।
সিউড়ি মহকুমার মধ্যে থাকা, সিউড়ি, সাঁইথিয়া ও দুবরাজপুর, এই তিনটি পুরসভা শেষ ধাপে যত সংখ্যক বাড়ির অনুমোদন পেয়েছে তাতে যে বেশ খানিকটা সুবিধা হবে, একান্তে সে কথা মানছেন শাসকদলের নেতারাই। তিনটি পুরএলাকার জন্য অনুমোদিত বাড়ির সংখ্যা ৩৫৮৩টি। দুবরাজপুর বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও সিউড়ি ও সাঁইথিয়া পুরসভায় বাড়ি তৈরির কাজ জোর কদমে এগোচ্ছে। অনেক উপভোক্তা ইতিমধ্যেই বাড়ি তৈরিও করে ফেলেছেন। কয়েক মাসের মধ্যে পুর নির্বাচন জেলার যে পাঁচটি পুরসভায়, সেই তালিকায় সিউড়ি মহকুমার তিনটি পুর শহরই রয়েছে। যে সব পরিবার বাড়ি পেলেন সেই পরিবারের ক্ষমতাসীন শাসকদলের বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখবেন এটাই আশা শাসক দলের নেতাদের। আড়ালে সেটা বলছেনও ওই নেতারা।
সিউড়ি পুরসভা সূত্রে খবর, ১৫ -১৬ অর্থবর্ষে সিউড়ি পুরসভা পেয়েছিল ৩১৫টি বাড়ি। ১৬-১৭ অর্থ বর্ষে কোনও বরাদ্দ না এলেও ১৭-১৮ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ১০০০টি। সিউড়ি পুরসভার হাউস ফর অলের দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর কাজী ফুরজুদ্দিন বলছেন, ‘‘সেগুলির কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে।’’ ১৮-১৯ অর্থবর্ষের জন্য সিউড়ি পুরসভা পেয়েছে ২০০০টি বাড়ি। সেগুলির মধ্যে ১৮৮২টি বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে। কিছু কিছু বাড়ি তৈরিও শেষ।
সাঁইথিয়া পুরসভা ১৫ -১৬ অর্থ বর্ষে পেয়েছিল মাত্র ১৬০টি বাড়ি। ১৬-১৭ বাদ দিয়ে পরের অর্থবর্ষে ৯০০টি। ১৮-১৯ অর্থবর্ষেও ৯০০টি বাড়ি পেয়েছে। পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত জানিয়েছেন আগের সব বাড়ির কাজ শেষ। শেষ ধাপের ৯০০টি বাড়ি তৈরির কাজও চলছে জোরকদমে। ১৫-১৬, এবং ১৭ -১৮ অর্থবর্ষে দুবরাজপুর পুরসভা বাড়ি পেয়েছিল যথাক্রমে ৪১৬ ও ৯৯৬টি। শেষ ধাপে অবশ্য দুবরাজপুর পুরএলাকার অনুমোদন কিছুটা কম এসেছে। সংখ্যাটা ৬৮৩টি। মুশকিল হল, সেই কাজে এখনও হাত পড়েনি। ১৮ সালে পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরানোর পর এখন প্রশাসক হিসাবে মহকুমাশাসক রাজীব মণ্ডল দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘অনুমোদন মিলেছে। জিও ট্যাগিং করে কাজে হাত দিতে এক সপ্তাহ লাগবে।’’
২০১৫ সালে শহর অঞ্চলে বসবাসকারী অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল যাঁদের বাড়ি নেই, তাঁদের জন্যই হাউস ফর অল বা সবার জন্য বাড়ি প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। কেন্দ্র দেয় দেড় লক্ষ, রাজ্য দেয় এক লক্ষ ৯৩ হাজার, বাকি ২৫ হাজারটাকা ওই প্রকল্পের উপভোক্তাকে দিতে হয়।
গত লোকসভা নির্বাচনে ভোটে আশানুরূপ ফল না হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, সরকারি প্রকল্প নিয়ে দলের কোনও নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে রেয়াত করা হবে না। জেলায় জেলায় শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘কাটমানি’ খাওয়ার অভিযোগ তুলে টানা বিক্ষোভও হয়। ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ আঁচ গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও পড়েছিল। তৃণমূল নেতাদের অবশ্য দাবি, সেটা হয় একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে। অনেকের ধারণা হয় ২৫ হাজার টাকা করে ‘কাটমানি’ নেওয়া হচ্ছে। সেটা নিয়ে কিছুটা হলেও বিব্রত ছিল সিউড়ি ও বোলপুর পুরসভা। সে জন্য পাল্টা প্রচারে নামতে হয় পুরসভাগুলিকে।
তৃণমূল নেতারা এখন দাবি করছেন, সেই সমস্যা অতীত। বরং পুর ভোটের আগে সরকারি আবাস যোজনায় এতগুলি বাড়ি তৈরির অনুমোদন মেলায় তাঁদের পক্ষে ভোট টানা সহজ হবে বলে দাবি করছেন সিউড়ি-সাঁইথিয়ার শাসক দলের নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘‘সহজ হিসেব দিয়ে বোঝানো যাবে উন্নয়নটা কী ভাবে হয়েছে এলাকায়।’’
আবাস যোজনায় শুরু হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে তার লভ্যাংশ কতটা ঘরে তোলা যায় তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে রয়েছেন দুবরাজপুর পুর এলাকার শাসকদলের নেতারা। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘পুরভোটের ঠিক আগে কাজ শুরু হলে উপভোক্তা পরিবারগুলি বাদে অনেকেই ক্ষুণ্ণ হতে পারেন।বাকিদেরটা পরের ধাপে হবে। কিছু দিন আগে কাজ শুরু হলে সেটা বোঝানো সহজ হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy