Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Headmistress

মনের রসদ পেতে অবসরের পরেও রোজ স্কুলে

বাড়ির কাজ সামলে প্রতি দিনই আসেন দিদিমণি। নিয়মিত ক্লাস নেন। ব্যতিক্রম অসুস্থতা। অবসর নেওয়ার আট বছর পরেও অর্চনার নিয়মিত স্কুলে আসা ও পড়ানো স্কুলও মেনে নিয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে।

Headmistress Archana Ruj

স্কুলে অর্চনা রুজ। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত 
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১১
Share: Save:

পড়ুয়াদের তিনি ভালবাসেন। তাদের কাছে এলে মনের রসদ পান। তাই ২০১৪ সালের অক্টোবরে দুবরাজপুরের কুখুটিয়া প্রাথমিক স্কুলে তাঁর অবসর রয়ে গিয়েছে শুধুই খাতায়-কলমে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরের দিন থেকে নিয়মিত স্কুলে এসে ক্লাস নিচ্ছেন অর্চনা রুজ (সাহু)। বিনা পারিশ্রমিকে।

অবসর প্রাপ্ত ওই শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘যত দিন শরীর চলবে, তত দিন আসব স্কুলে। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা হয়ে কাজে ঢুকেছিলাম ১৯৭৬ সালে। দু’টি স্কুল ঘুরে ১৯৮৩ সালে এই স্কুলে আসি। তার পরে এক টানা ৩১ বছর এই স্কুলে কাটিয়েছি। স্কুল, সহকর্মী, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি অদ্ভুত টান অনুভব করি।” সেই টানেই অবসরের পরেও ঘরে বসে থাকতে পারেননি দিদিমণি। অন্য দিকে, অবসরের পরেও পড়ুয়াদের ভালবাসা আর বর্তমান সহকর্মীদের সম্মান অটুট।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২০০। এক জন টিআইসি-সহ বর্তমানে মোট পাঁচ জন শিক্ষক আছেন। প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকের অভাব নেই। তবে বাড়ির কাজ সামলে প্রতি দিনই আসেন দিদিমণি। নিয়মিত ক্লাস নেন। ব্যতিক্রম অসুস্থতা। অবসর নেওয়ার আট বছর পরেও অর্চনার নিয়মিত স্কুলে আসা ও পড়ানো স্কুলও মেনে নিয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে।

বিদ্যালয়ের টিআইসি উদয় পাল এবং সহ শিক্ষক রামতনু নায়কেরা বলছেন, ‘‘ওঁকে আমরা প্রাক্তন বলে মনেই করি না। নিয়মিত ক্লাস নেওয়া, ১৫ দিন অন্তর পড়ুয়াদের নিয়ে সাহিত্যসভার আয়োজন তো আছেই— ওঁর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মিড-ডে মিল রান্নার দেখাশোনা করা, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতায় যত্ন নেওয়া।’’ অর্চনা বলেন, ‘‘ঠিকমতো মিড-ডে মিল রান্না হচ্ছে কি না। বাচ্চারা স্কুলে এসে ঠিকমতো খেতে পেল কি না। কেউ আধপেটা খেয়ে চলে গেল কি না— সব সময়ে নজরে রাখি। এগুলি করতে আমার ভাল লাগে।’’

কুখুটিয়া গ্রামেই বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি অর্চনার। দু’ছেলে, এক মেয়ে। তিন জনই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। বাড়িতে নাতি, নাতনি আছে। ভরপুর সংসার। স্বামী সুবোধ রুজ স্ত্রীর সঙ্গে একই দিনে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। পরিবারে সবাই চেয়েছিলেন অবসর জীবনযাপন করুন অর্চনা। চাননি শুধু তিনি। তিনি বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে ভুল বানান ঠিক করে দিচ্ছিলাম বলে এক খুদে পড়ুয়া আমাকে বলল, তুমি বুড়ো হয়ে গিয়েছ তাও লেখাপড়া কর। আমি বললাম, এটাতো আমার কাজ। আসলে ওদের সঙ্গে থাকলে মনের রসদ পাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Headmistress dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy