বাঁকুড়ার পোয়াবাগানে বাসুদেব আচারিয়াকে সম্মান জানাচ্ছেন এক প্রবীন কর্মী। —নিজস্ব চিত্র।
ছিলেন সর্বভারতীয় নেতা। প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রথম সারির দলগুলির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ছিল। সেই বাসুদেব আচারিয়ার শেষ যাত্রায় শামিল হলেন রেলের হকার থেকে শুরু করে মুটে, মজদুরেরা। সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, সর্বভারতীয় নেতা হলেও মেহনতি মানুষের সমস্যা নিয়ে আজীবন লড়াই বাসুদেবকে শ্রমিক, গরিবদের কাছের মানুষ করে তুলেছিল।
বুধবার কলকাতা থেকে তাঁর দেহ বাঁকুড়ার পোয়াবাগানে আসে। সেখানে দলের নেতা-কর্মীরা তো বটেই, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ছুঁয়ে যায় বাসুদেবকে।
দুপুরে লাল ঝান্ডা নিয়ে ৮১টি বাইকের র্যালি শববাহী শকট পুরুলিয়া শহরে নামোপাড়ায় সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে আসে। সেখানে আগে থেকেই জনতার ঢল নেমেছিল। রেলের হকার থেকে রিক্সা চালক, মুটে-মজদুর সহ নানা স্তরের মানুষ ছিলেন। ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ এসেছিলেন বাসুদেববাবুকে শেষ দেখা দেখতে।
পুরুলিয়া শহরে দেহ নিয়ে শোক মিছিল বেরোয়। সন্ধ্যার মুখে দেহ আসে আদ্রার বাসভবনে। সেখানে পরিবারের লোকজন শ্রদ্ধা জানান। এখানে আগে থেকে ভিড়ের মধ্যে অপেক্ষায় ছিলেন এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। রাজনৈতিক জগতের লোক নন বিশ্বনাথ। তিনি বলেন, ‘‘বাসুদার সঙ্গে পরিচয় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় থেকে। তখন তিনি পাঁচুডাঙায় থাকতেন। উঁচু দরের মানুষ হিসাবেই তাঁকে চিনেছি।সর্বভারতীয় স্তরের নেতা, কিন্তু দেখা হলেই কুশল জিজ্ঞাসা করতে ভুলতেন না। সেই টানেই শেষ দেখা করতে এসেছি।’’
শেষ যাত্রায় পুরোটা হেঁটেছেন আদ্রার আবৃত্তি পরিষদের কর্ণধার আরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জয়তী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দশক ধরেই আমাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনের প্রদীপটা উনিই জ্বালাতেন। এ বারেও ফোন করেছিলাম। বলেছিলেন, শরীর বেগতিক। ওনার এ ভাবে আদ্রায় ফেরাটা মানতে মন মানতে চাইছে না।’’
স্বজন হারানোর শোকে কাতর ২০০৫ সাল থেকে বাসুদেবের গাড়িচালক কাশীপুরের বাসিন্দা পবন গরাঁই। ভেজা গলায় বলেন, ‘‘স্যরকে ৮ অক্টোবর আমিই গাড়িতে করে অন্ডাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম। ভাবিনি তিনি ফিরবেন শববাহী গাড়িতে।”
তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাও। রাজনৈতিক আকচা-আকচি দূরে সরিয়ে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো, বিজেপির বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় থেকে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো।
আদ্রায় বেনিয়াসোলে শ্মশানে যান কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার ও রঘুনাথপুরের বিজেপির বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি।
পলাশকোলায় বাসভবনে যান কাশীপুরের বিজেপি বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা।
আসেন এসইউসির পুরুলিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহ, রেলকর্মী সংগঠনের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়রাও। আদ্রায় এসেছিলেন সাঁতুড়ির তৃণমূলের সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘দলগত ভাবে নয়, বাসুদেববাবুর শেষ যাত্রায় এসেছি শুধু অন্তরের টানেই।’’
বাসভবন থেকে শোক মিছিল যখন আদ্রা শহর পরিক্রমা করছে, ভারত-নিউ জ়িল্যান্ডের ম্যাচ দেখা ছেড়ে তখনও রাস্তার পাশে মানুষের ভিড়। রাতে শেষকৃত্য হয় বেনিয়াসোলের শ্মশানে। সেখানেও ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। আজীবন উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন বাসুদেব। মৃত্যুর পরেও সবার পথ যেন তিনি মিলিয়ে দিয়ে গেলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy