পুরুলিয়া শহরের হাটমোড়ে চৌডল কেনাবেচা। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলার প্রাণের উৎসব টুসু ও ভাদু। ফি বছর মকর সংক্রান্তির আগের দিনে টুসু জাগরণে মেতে উঠেন পুরুলিয়া জেলার আট থেকে আশি, পুরুষ থেকে নারী। পরের দিন সকালে নদীর জলে চৌডলে টুসু বিসর্জন দিয়ে মকর স্নান সেরে বাড়ি ফেরেন সবাই। সেই সঙ্গে রয়েছে পিঠেপুলি-সহ নানা খাওয়াদাওয়া।
কিন্তু দিন দিন যেন টুসু ও চৌডলের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। তবে কি মুঠো ফোনে বন্দি থাকা নতুন প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এই সব লোকসংস্কৃতি তথা জেলার গর্বের পরবগুলি থেকে?
জয়পুর থানার বড়টাঁড় হাটে শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল, আগের মতো রঙিন চৌডল কেনার সেই থিকথিকে ভিড় আর নেই। মুখ ভার বিক্রেতাদের। আড়শা থানার বামুনডিহা থেকে চৌডল বিক্রি করতে আসা করম যোগী বলেন, ‘‘বাজার খুবই খারাপ। অনেকগুলি চৌডল এনেছিলাম। কিন্তু বিক্রি হল না।’’
পুরুলিয়া মফস্সল থানার বেলকুড়িতে প্রতি বুধবার ও শনিবার হাট বসে। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল প্রচুর বিক্রেতা রয়েছেন, কিন্তু চৌডল কেনার লোক নেই। তাঁদের অনেকে অবিক্রিত চৌডল ফেরত নিয়ে গেলেন। পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের রানিবাঁধ গ্রামের এক যুবক হাটে এসেছিলেন ছোট মেয়ের জন্য চৌডল কিনতে। তিনি বলেন, ‘‘আমরাই মনে হয় শেষ প্রজন্ম, যাঁরা সন্তানদের জন্য চৌডল কিনছি। আমরা কি আমাদের সংস্কৃতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি?’’
কেন জনপ্রিয়তা হারিয়ে যাচ্ছে চৌডলের? পুরুলিয়া জেলার লোক গবেষক সুভাষ রায়ের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই চৌডলের বিক্রি কমে গিয়েছে। আগে মকর সংক্রান্তির পনেরো দিন আগে থেকেই সার দিয়ে চৌডল বিক্রি হত হাটে, বাজারে। এ বার একদমই বিক্রি নেই দেখলাম। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। সংস্কৃতির অবলুপ্তির আর বাকি নেই। আগে সারা মাস জুড়ে টুসু গান হত। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মেয়েরা বসে নিজেদের গলায় টুসু গান গাইতেন। এখন সে সব অতীত।’’ মোবাইল ফোনে মজে থাকাই এর মূলে বলে মনে করছেন তিনি।
রবিবার পুরুলিয়া শহরের হাটের মোড়ে দেখা গেল চৌডল বিক্রি করতে এসে বিক্রি না হওয়ায় বসে রয়েছেন টামনা থানার ডুমুরশোলের বাসিন্দা চিন্তা যুগী।
তিনি বলেন, ‘‘বিক্রি তো হচ্ছেই না, এমনকি ছোট ছোট চৌডলের জন্য ৭০ টাকা চাইলে ৫০ টাকাও দিতে চাইছেন না ক্রেতারা।’’
টুসু পরব উপলক্ষে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ব্যবস্থাপনায় সোমবার কাঁসাই নদীর পাড়ে টুসু গীত ও চৌডল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে মানভূম কালচারাল আকাডেমি। ফি বছর বেশ কিছু সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব টুসু গান ও চৌডল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। কিন্তু এতেও কি আর টুসুর সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে? প্রশ্ন লোক সংস্কৃতি প্রেমীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy