Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

অনটনকে হারিয়ে দিল তিন কন্যা

পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই। কিন্তু অভাবের তাড়নায় মাধ্যমিকের পরেই বই-খাতার সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচে যেতে বসেছিল তিন ছাত্রীর। হাল ছাড়েনি ওরা। সমস্ত বাধা কাটিয়ে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছে। তাতেই এসেছে সাফল্য। ওরা সুস্মিতা, সুমনা এবং মৌমিতা।

মৌমিতা রায়, সুমনা লোহার ও সুস্মিতা ভুঁইয়া।—নিজস্ব চিত্র

মৌমিতা রায়, সুমনা লোহার ও সুস্মিতা ভুঁইয়া।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০০:৪৯
Share: Save:

পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই। কিন্তু অভাবের তাড়নায় মাধ্যমিকের পরেই বই-খাতার সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচে যেতে বসেছিল তিন ছাত্রীর। হাল ছাড়েনি ওরা। সমস্ত বাধা কাটিয়ে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছে। তাতেই এসেছে সাফল্য।

ওরা সুস্মিতা, সুমনা এবং মৌমিতা। তিন জনই বিষ্ণুপুর থানার রাধানগর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী। সাফল্যের সঙ্গে তিন জনই কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে এ বার। মাধ্যমিকের পরে ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ফ্রিড’। আর তাদের সাহায্যে মেধার সঙ্গে লড়াইয়ে হার হয়েছে দারিদ্রের।

রাধানগর সংলগ্ন লায়েকবাঁধ এলাকার সুস্মিতা ভুঁইয়ার বাবা শ্যামসুন্দরবাবু জঙ্গল থেকে জ্বালানি পাতা কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করেন। সেই টাকাতেই কোনও মতে সংসার চলে। কলা বিভাগে ৪১৪ নম্বর পেয়ে এ বারে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে মেধাবী ছাত্রীটি। এখন তার দু’ চোখে অনেক স্বপ্ন। ভূগোল নিয়ে পড়তে চায় সে। শিক্ষিকা হতে চায়।

কিন্তু মাধ্যমিক পাশ করার পরেই সুস্মিতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছিল। শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “আমার ক্ষমতা ছিল না ওকে আর পড়ানোর। তাই মাধ্যমিকের পরে বলেছিলাম, অনেক হয়েছে। এ বার থাক।” সেই সময় মেধাবী মেয়েটির পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। বইয়ে মুখ গুঁজে সুস্মিতা তার পরে বাকি লড়াইটা জিতে নিয়েছে।

রাধানগর এলাকার বাসিন্দা সুমনা লোহার এ বার ৩৯১ নম্বর পেয়ে কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। সুমনার বাবা সন্টু লোহার বিষ্ণুপুর থেকে মাছ কিনে এনে রাধানগরের বাজারে বিক্রি করেন। দিনের শেষে নুন আর পান্তা ফুরোয় পরিবারটিতে। এ দিকে মেয়ে গোঁ ধরেছে পড়াশোনা করবে বলে। সন্টুবাবু বলেন, “পড়াশোনার খরচ আর টানতে পারছিলাম না। মাধ্যমিকের পর ওকে বলেছিলাম বাড়ির কাজে মন দিতে।’’ বই থেকে মুখ তুলতে হয়নি সুমনাকেও। মেধাবী মেয়েটি বলে, ‘‘একটা স্বপ্ন পূরণ হল। এখনও আরও অনেক দূর যেতে হবে।”

রাধানগর সংলগ্ন সাঞ্চা গ্রামের মৌমিতা রায়ের বাড়ির ছবিটাও একই রকম। তার বাবা রবিলোচন রায় পেশায় চাষি। বিঘা খানেক জমি রয়েছে। তাতে চাষ করে সংসার চলে না। তাই অন্যের জমিতে দিনমজুরি করতে হয়। রবিলোচনবাবু বলেন, “মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন আমিও দেখতাম। কিন্তু অভাব বড় বাধা।’’ মৌমিতা ৩৭৫ নম্বর পেয়ে কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন স্বনির্ভর হয়ে আরও অনেক অভাবী ছেলেমেয়ের পাশে দাঁড়াতে চায় সে।

সুস্মিতা, সুমনা এবং মৌমিতা বলে, “সেই সময় সাহায্য না পেলে কলেজের চৌকাঠ ডিঙোনোটা স্বপ্ন হয়েই থেকে যেত।’’ তিন কন্যার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ফ্রিডের কর্মকর্তারাও। সংস্থার জেলা কো-অর্ডিনেটর কাজল শর্মা বলেন, “তিন জনেই এক স্কুলে পড়ত। মাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই মেধাবী ছাত্রী হিসাবে ওরা আমাদের নজরে আসে।’’ কাজলবাবু জানান, ফ্রিডের পক্ষ থেকে সুস্মিতাদের বিনামূল্যে পাঠ্য বই এবং কোচিং দেওয়া হয়েছে। কলেজে পড়ার সময়ও ওদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

ফ্রিডের সম্পাদক সোমনাথ পাইন বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকার প্রান্তিক পরিবারের ছাত্রীদের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচও আমরা যত দূর পর্যন্ত সম্ভব বহন করি। ওই তিন ছাত্রীরও যাতে টাকার অভাবে কখনও পড়াশোনা থেমে না যায় সেটা আমরা দেখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

HSexam result student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy